ভারতমালা প্রকল্পে ইসলামাবাদের ভুক্তভোগীরা বঞ্চনার শিকার, পাটোয়ারী ও কোম্পানির যোগসাজশে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকল্পের স্বার্থে বহু মানুষ তাদের পৈত্রিক জমি, ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমি সরকারের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণের বেলায় শুরু থেকেই চলছে এক ধরনের রহস্যজনক আচরণ। অনেকেই পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ পেলেও, ইসলামাবাদ এলাকার একাধিক পরিবার অভিযোগ তুলেছেন যে, তাদের জমির প্রকৃত পরিমাণ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। বরং ক্ষতিপূরণের অর্ধেক টাকা দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছে ঝাণ্ডু কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিক উদ্দিন লস্কর জানান, দীর্ঘ এক বছর আগে আমি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন জমা দিয়েছিলাম সঠিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে। কিন্তু আজও সেই আবেদন ধুলায় পড়ে আছে। কোনো নির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই, নেই কোনো জবাবদিহিতা। তিনি আরও বলেন, আমার কৃষিজমিতে বছরে তিনবার ফসল হতো। সেই জমি সড়ক নির্মাণের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু ক্ষতিপূরণ এখনও অর্ধেক দেওয়া হয়েছে। বাড়ির একটি অংশ ভেঙে গেছে, তাতেও কোনও ক্ষতিপূরণ মেলেনি।

আরেক ভুক্তভোগী মুসলিম উদ্দিন লস্কর ও ফকর উদ্দিন লস্কর অভিযোগ করেন, একই মৌজার মধ্যে আমাদের জমি, একই রকম নথিপত্র – অথচ আমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে কম টাকার ক্ষতিপূরণ, যেখানে পাশের জমির মালিক সম্পূর্ণ টাকা পেয়েছেন। এর মানে কী? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো দালালি চক্র বা অফিসের লোকের হাত রয়েছে।

স্থানীয় নারী নাসিম আক্তার লস্কর জানান, আমার জমিতে সার্ভিসিং রয়েছে, যার আলাদা মূল্য রয়েছে। অথচ কোম্পানি সেটি অগ্রাহ্য করে জোর করে দখল নিতে চাইছে। পাটোয়ারীর রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হয়, আর সেখানেই হচ্ছে গরমিল। পাটোয়ারীকে না দিলে কোনো কাজ হয় না। এটা যেন আইন হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কনস্ট্রাকশন কোম্পানির লোকেরা প্রায়ই হুমকির সুরে কথা বলেন।

কোনো কথা শুনতে নারাজ তারা। উপরন্তু, জেলা ভূ-বাসন অফিস ও সার্কেল অফিসে বারবার ঘুরেও ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের মতে, “যেখানে অন্যান্য এলাকা বা ব্লকে সঠিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইসলামাবাদে এই বৈষম্য কেন? একই প্রকল্প, একই নীতি তবুও এতোটা ফারাক প্রশাসনের নিরব সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সাধারণ জনগণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা দাবি করছেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জমি মাপজোখ এবং ক্ষতিপূরণ বিতরণের পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি উঠেছে। উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু জনগণের অধিকার হরণ করে নয়।

ভারতমালা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। প্রশাসন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে কোনো অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, আগামীতে জনগণের আস্থা আর থাকবে না কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…