
বরাকবাণী প্রতিবেদন বড়খলা, ১৪ মেঃ একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পেরিয়েও বেহাল রাস্তাঘাট, জলে ডুবে থাকা স্কুলপথ, কাদা-জল ঠেলে হাসপাতালমুখী অ্যাম্বুলেন্স—এই ছবি যেন বদলাতে চায় না বরাক উপত্যকার বৃহৎ অংশে। ফের সামনে এল শিলচর-জয়ন্তীয়া সড়কে অসম মালা প্রকল্পের নির্মাণ কাজের চরম গাফিলতি ও অনিয়ম। বড়খলা থেকে কাটিগড়া—এই দুই বিধানসভার মানুষের যাতায়াতের প্রধান লাইফলাইন এই সড়ক।
অসম মালা প্রকল্পের আওতায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও বাস্তবে কাজের মান ও গতি নিয়ে উঠছে গুরুতর প্রশ্ন। কোথাও কচ্ছপ গতিতে চলছে নির্মাণ, কোথাও আবার অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে রাস্তাঘাট। আর তারই মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বর্ষা এখনও ঠিকমতো জমেও ওঠেনি, কিন্তু তাতেই কৃত্রিম বন্যার রূপ নিচ্ছে সড়ক লাগোয়া বড়খলার একাধিক এলাকা। কারণ, রাস্তার পাশে জল নিকাশির জন্য কোনও ড্রেনই নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বৃষ্টি শুরু হতেই জল জমে গেছে রাস্তা ও আশপাশের এলাকায়। রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে অথচ পাশেই নেই সঠিক নিকাশির ব্যবস্থা।

এমন চরম অব্যবস্থাপনায় এখন হাঁটু জল ঠেলে পথ চলতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী, যানবাহন চালক, অফিসগামী মানুষসহ এলাকাবাসীকে। প্রশ্ন উঠছে, কেন এই ভুল বারবার? বিগত বছরগুলিতেও দেখা গিয়েছিল এই একই দুর্ভোগ। জনতা বহুবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে প্রশাসনের কাছে। আন্দোলন হয়েছে, স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, অথচ ফলাফল শূন্য। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর যেন নির্লিপ্ত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার ওপর পা রাখলেই উঠে আসছে পিচ। কোথাও কোথাও আবার রাস্তা এতটাই বেহাল যে, তা পথ না হয়ে ক্ষেতের মাঠ বলে মনে হচ্ছে। গবাদি পশু ও মানুষের একপথে চলাচল এখন নিয়মিত দৃশ্য। এমনকি রাস্তায় চলতে গিয়ে বাইক, অটো থেকে পড়ে আহত হচ্ছেন মানুষ। একাংশের প্রশ্ন, উন্নয়নের এই ‘মালা’ কি শুধুই কাগজে-কলমে? সরকারের পক্ষ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও, তার ফলস্বরূপ কীভাবে এমন বেহাল সড়ক হতে পারে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যখন সাধারণ মানুষ সমস্যায় জর্জরিত, তখন কোথায় বরাকের মন্ত্রী, বিধায়কেরা? কুম্ভনিদ্রায় তলিয়ে রয়েছেন? নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি, যে মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা, তা কি শুধু ক্ষমতার সিঁড়ি চড়ার হাতিয়ার? আজ যখন সেই জনগণ কাদাজলে নাকানিচুবানি খাচ্ছে, তখন তাদের পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই! প্রকল্পের কাজের গুণমান নিয়ে ইতিমধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
একাধিকবার গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এই অভিযোগ। অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে না কোনও কার্যকরী হস্তক্ষেপ। জনসাধারণের প্রশ্ন একটাই—এই দুর্ভোগ কবে কাটবে? কবে পাকা হবে পরিকল্পনা, গতি পাবে নির্মাণ, আর বেহাল রাস্তার বদলে মিলবে নিরাপদ যাতায়াতের নিশ্চয়তা? এই প্রশ্নের জবাব জনগণ এখনই চায়। কারণ কাদা-জল মেখে আর কতদিন হাঁটবে বরাকের মানুষ?