হাইলাকান্দির গাগলাছড়া বাগানে নির্ভয়া কান্ডের পুনরাবৃত্তি! মূল অভিযুক্ত এখনো পলাতক, পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ

নির্ভয়া কাণ্ডের বিভীষিকাময় পুনরাবৃত্তি যেন আবারও কাঁপিয়ে দিল বরাক উপত্যকাকে। গত ২ মে, সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ২০ বছরের এক যুবতী প্রতিদিনের মতো কাজ শেষ করে লালাবাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর পিছু নিয়েছিল সেই সন্ধ্যায়।

তিন জন পিশাচসদৃশ যুবক ওই যুবতীকে জোরপূর্বক গাগলাছড়ার কালাছড়া বাগানের এক নির্জন স্থানে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচারের পালা। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশিও চলে অকথ্য মানসিক নির্যাতন। উপর্যুপরি ধর্ষণের শিকার হন সেই যুবতী।

যুবতীর অবস্থা এতটাই সংকটজনক হয়ে পড়ে যে তাঁকে তড়িঘড়ি হাইলাকান্দি এস কে রায় সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, শারীরিকভাবে যেমন ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন তিনি। ঘটনার পরপরই লালা থানায় দায়ের হয় একটি মামলা (কেস নং–৪১/২৫)। ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১২৬(২)/৭০(১)/৩(৫)-এর আওতায় মামলা রুজু করা হয়।

তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দুজন—কৃষ্ণ রবিদাস ও মুন্না কৈরি—কে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত পাপ্পু রবিদাস এখনও পলাতক। প্রশ্ন উঠছে, তাকে এখনও কেন ধরা গেল না? গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের বৃহস্পতিবার হাইলাকান্দি জেলা দায়রা ও জজ আদালতে পেশ করা হলে,

সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি পুরকায়স্থের আবেদনে আদালত তাঁদের দুদিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করে। এই জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাঁদের প্রশ্ন—নারীদের জন্য এত অনিরাপদ কেন হয়ে পড়ছে সমাজ? কেন রাত নামলেই নারীর পথঘাট যেন নরকের দরজা হয়ে ওঠে?

যে অপরাধীরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ভয়ানক অত্যাচার চালাতে পারে, তাদের জন্য কি আর সাধারণ আইন পর্যাপ্ত? সমাজে যদি এমন পশুদের জায়গা না থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে কঠোরতম শাস্তি প্রয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন।

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠল, শুধু আইন করলেই হবে না—প্রয়োজন আইনের কার্যকরী প্রয়োগ, প্রয়োজনে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক সাজা। তাহলেই হয়তো নির্ভয়া, গাগলাছড়ার এই যুবতীর মতো আর কোনও মেয়েকে এমন নারকীয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। সমাজ কি জেগে উঠবে এবার? নাকি আবারও কিছুদিনের উত্তেজনার পর চাপা পড়ে যাবে এই ভয়াবহ অধ্যায়?

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…