
বরাকবাণী প্রতিবেদন কচুদরম ৫ মেঃ ২ মে, শুক্রবার প্রথম দফার ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে। কিন্তু ভোটের উত্তাপ এখনো প্রশমিত হয়নি। হাটে-ঘাটে, বাজারে-দোকানে সর্বত্র চলছে বিশ্লেষণ আর কৌতূহলী জল্পনা—কে জিতবে, কে হারবে, কত ভোটে এগিয়ে থাকবে কোন প্রার্থী! ভোট গণনার আগেই যেন শুরু হয়ে গেছে গণনার প্রতিযোগিতা। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন স্বচেতন মহল এবং রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের মুখে মুখে শুধুই ভোটের হিসেব।
কোনো পক্ষ জয়ের দম্ভে বুক ফুলিয়ে বলছে আমরা জিতছি, আবার কেউ বা সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। জেলা পরিষদ আসনে দিদারখোষ নগদী গ্রামের কংগ্রেস প্রার্থী সাহিন আহমেদ লস্করের জয় নিশ্চিত বলে দাবি করেছেন তার সমর্থকরা। তারা আশাবাদী, ভোটের মাঠে সাহিনের প্রতিপক্ষরা তার ধারেকাছেও নেই।
অন্যদিকে, দিদারখোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের আঞ্চলিক পঞ্চায়েত (এপি) পদে বিজেপির মলয় কুমার দাশের সমর্থকরা শতভাগ নিশ্চিত যে মলয়বাবু জিতছেন। তবে রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন তৃণমূলের আব্দুল্লা লস্কর। অনেকে আবার বলছেন, কংগ্রেস প্রার্থী কমর উদ্দিন আহমেদ থাকবেন তৃতীয় স্থানে। এই হিসেব অবশ্য মলয় দাশের সমর্থকদের নিজের তৈরি চিত্র।

ভারীকান্দি জিপিতে নির্দল প্রার্থী সিমি বেগম চৌধুরীর সমর্থকরা একধাপ এগিয়ে। তারা বলছেন, এই আসনে সিমির জয় একেবারে নিশ্চিত। যদিও কংগ্রেস প্রার্থী রাজনা বেগম মজুমদার দ্বিতীয় স্থানে থাকবেন বলে তারা ধরে নিচ্ছেন। এখানেও উত্তেজনা কম নয়।
স্বাধীন বাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের এপি পদে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জুনু বাবুর ভাতিজার স্ত্রীর জয় এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এলাকাবাসী এবং সচেতন মহলের বিশ্লেষণে তার জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। রাজনৈতিক ব্যাকিং না থাকলেও তার প্রতি মানুষের সমর্থন চোখে পড়ার মতো। কচুদরম জিপিতে কংগ্রেসের প্রতীক হাত এবং স্বতন্ত্র দলীয় প্রতীক হাতী দুই পক্ষই জয়ের স্বপ্ন দেখছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কংগ্রেস প্রার্থী কাদির আহমেদ লস্কর দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং তিনি বর্তমানে পাপ্তন এপি। অন্যদিকে, নজরুল হক লস্করের রাজনীতিতে নতুন আগমন হলেও তার প্রচার-প্রচারণা নজর কেড়েছে। তবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে কাদিরের পাল্লা একটু ভারী বলেই মত অনেকের।

গ্রামের মোড়, চায়ের দোকান, স্থানীয় হাট-বাজারে এখন একটাই আলোচনার বিষয়— কে জিতছে? বিশ্লেষণের নামে অনেকে নিজের দলের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখছেন, আবার কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করছেন। তবে প্রকৃত ফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে ভোট গণনা পর্যন্ত।
স্থানীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে যদি কংগ্রেস প্রার্থীরা ব্যাপক হারে পরাজিত হন, তাহলে ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে সোনাই কেন্দ্র কংগ্রেসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে বর্তমান বিধায়ক করিম উদ্দিন বড়ভুইয়া যদিও মাঠে প্রচারে ছিলেন না, তবুও এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের সুবাদে তিনি মানুষের মাঝে আলাদা অবস্থান তৈরি করেছেন। এই উন্নয়নের প্রতিফলনই দেখা যাবে ভোটের ফলাফলে।
ভোট শেষ হলেও জয়ের হিসেব শেষ হয়নি। চায়ের কাপে ঝড় উঠবেই। তবে আসল ঝড় উঠবে গণনার দিন। সেদিনই বোঝা যাবে, কে জিতছে আর কে হারছে—এখন যা চলছে, তা নিছকই ভোট-পরবর্তী উত্তাপ আর জনমানসের রাজনৈতিক উত্তেজনা।