
বরাকবাণী প্রতিবেদন গুয়াহাটি ২রা মেঃ বৃহস্পতিবার পালিত হয় বড়ো জাতির পিতারূপ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। অসমের পাশাপাশি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতেও এই দিবসটি পালিত হয়। এ উপলক্ষে নয়াদিল্লীতে আয়োজন করা হয় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। বৃহস্পতির দিনটি অসম ও বড়ো জনগোষ্ঠীর জন্য যুক্ত হলো এক নতুন অধ্যায়ে।
এই দিন নয়াদিল্লীর কৈলাশ নগরে বডোফার নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করা হয়। উন্মোচন করা হয় বডোফার একটি পূর্ণাঙ্গ মূর্তি। বিকেল চারটায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মর নামে সড়ক ও ৯ ফুট উচ্চতার মূর্তির উদ্বোধন করেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাশাপাশি, তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অমিত শাহ বলেন, ৩৫ বছর বয়সে বডোফা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম বড়ো জাতির জন্য যে অবদান রেখে গেছেন, তা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। আজ দিল্লির ‘হৃদয়’ কৈলাশ নগরের মতো মর্যাদাপূর্ণ এলাকায় তাঁর নামে একটি সড়ক ও মূর্তি উদ্বোধন করতে পারা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আজ বডোফা বেঁচে থাকলে এই দৃশ্য দেখে তিনি অত্যন্ত খুশি হতেন।
আজ থেকে আপনাদের হীনমন্যতায় ভোগার প্রয়োজন নেই। এই দেশে আপনাদের অধিকারও আমার সমান। আজ বড়োল্যান্ডের যুবকদের আর অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে না। তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের বড়ো শান্তিচুক্তির ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। তিনি জানান, নির্বাচনের আগেই ১০০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে।
এই অনুষ্ঠানে অমিত শাহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, মন্ত্রী উৰ্খাও গৌৰা ব্রহ্ম, বিটিচি-র মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য প্রমোদ বড়ো এবং এবছুর সভাপতি দীপেন বড়ো প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিটিচির মুখ্য কার্যনির্বাহী প্রমোদ বড়ো ও এবছুর সভাপতি দীপেন বড়ো ১ মে তারিখটিকে একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বর্ণনা করেন। গোপীনাথ বরদলৈয়ের পর উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মই হলেন দ্বিতীয় অসমীয়া ব্যক্তি, যাঁর নামে দিল্লিতে একটি সড়কের নামকরণ হলো।
বডোফা না থাকলে বড়ো জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রক্ষা পেত না, বলেন প্রমোদ বড়ো। তিনি আরও বলেন, এখন বড়ো জনগোষ্ঠী আর হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নেই। দিল্লির কৈলাশ কলোনিতে বড়োল্যান্ড হাউস প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, বড়ো জাতিকে সর্বাঙ্গীনভাবে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দুই বছর আগে ঘোষণা করেছিলেন যে বডোফার জন্মতিথি ছাত্র দিবস হিসেবে পালন করা হবে এবং বিগত বছরে কেবিনেট বৈঠকে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীকে রাজ্য সরকারীভাবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অসমের এক প্রাচীন ক্ষুদ্র জনজাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সমস্যাকে জাতীয় স্তরে উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
তিনি আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক ও বিশেষ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে গণতান্ত্রিক লড়াই চালিয়ে এসেছে, আজ তার সাফল্য নিশ্চিত হয়েছে। সেইসঙ্গে বডোফার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। অন্যদিকে, এবছুর সভাপতি দীপেন বড়ো বলেন, আজ দিল্লিতে বডোফার নামে সড়কের নামকরণ, মূর্তি উদ্বোধন এবং জনসভায় অংশ নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ। তিনি যেমন প্রতিশ্রুতি দেন, তেমনি কাজও করেন।
তিনি আরও বলেন, অসম ভবনের কাছে মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈয়ের নামে সড়ক নামকরণের পর উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার নামে দিল্লিতে পথ নামকরণ হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং বিটিচির মুখ্য কার্যনির্বাহী প্রমোদ বড়োকেও ধন্যবাদ জানান।