
বিমল চৌধুরী বরাকবাণী প্রতিনিধি শনবিল ২৩ এপ্রিল: আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে জোরকদমে শুরু হয়েছে প্রচারাভিযান। তবে এবার প্রচারে রীতিমতো চমক নিয়ে হাজির হয়েছেন শাসকদলের দুই প্রভাবশালী মুখ—জুনেল হোসেন ও বিলাল আহমেদ। ধর্মীয় চিহ্নকে সামনে রেখে সম্প্রীতির বার্তা দিতে তাঁরা যেভাবে নিজ নিজ প্রচার পরিচালনা করছেন, তা ইতোমধ্যেই সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
একদিকে রয়েছেন পাথারকান্দি সমষ্টির বিধায়ক তথা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের ঘনিষ্ঠ ও শ্রীভূমি জেলা বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার প্রভারী জুনেল হোসেন। অন্যদিকে রয়েছেন রামকৃষ্ণ নগর সমষ্টির বিধায়ক বিজয় মালাকার-এর ঘনিষ্ঠ ও আনিপুর জেলা পরিষদ আসনে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী রেজওয়ানা বেগমের প্রতিনিধি বিলাল আহমেদ।
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিলাল আহমেদের কপালে স্পষ্ট তিলক এবং রেজওয়ানা বেগমের হাতে শাঁখা। সাধারণত মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের এভাবে হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন ধারণ করা বিরল। কিন্তু এই ছবি পোস্ট করে তাঁরা একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন সম্প্রীতির। বিলাল জানান, ধর্ম আমাদের আলাদা করলেও ভোটের ময়দানে আমরা একে অপরকে বুঝে চলি, ভালোবাসি।

আমি সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে এই প্রচার কৌশল বেছে নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিপক্ষ নয়, আমার সহযাত্রী হলেন রেজওয়ানা বেগম। তাঁর হয়ে কাজ করাই আমার কর্তব্য। এই ছবি ঘিরে সমাজে যেমন প্রশংসার জোয়ার উঠেছে, তেমনই সমালোচনাও কম হয়নি। কেউ বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে ধর্মীয় চিহ্নের এমন বেহিসেবি ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত? আবার কেউ বলছেন, এতদিন পরে এমন বার্তা খুবই প্রয়োজন ছিল।
অন্যদিকে, সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হেঁটেছেন জুনেল হোসেন। মাথায় নামাজের টুপি, নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে তিনি মাঠে নেমেছেন বিজেপির প্রচারে। তাঁর স্ত্রী শামিমা আক্তার কাজিরবাজার জিপির ৬নং কচুখাউরী ওয়ার্ডে বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জুনেল বলেন, আমি আমার ধর্ম পালন করি মন থেকে, তবু বিজেপির সঙ্গে কাজ করতে কোনো সংকোচ নেই।

বিজেপি এখন আর কেবল একটি হিন্দু-পরিচিতি দল নয়, বরং এটি একটি সর্বজনগ্রাহ্য উন্নয়নমুখী শক্তি। তাঁর মতে, ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে চলার পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাই হচ্ছে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিণতি। সমাজের একাংশও বলছেন, জুনেল মুসলিম পরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখে দলীয় বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন—এটাই সত্যিকারের বলিষ্ঠতা।
বিলাল-রেজওয়ানা জুটির ধর্মীয় রূপান্তরিত প্রচার এবং জুনেল হোসেনের ধর্মীয় দৃঢ়তা-এই দুই প্রচার কৌশলের মধ্যে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন। বাজার হাট থেকে শুরু করে ফেসবুক, চায়ের দোকান কিংবা রাজনৈতিক মহল-সব জায়গাতেই এই দু’টি প্রচার রীতিমতো আলোচনার বিষয়। কেউ বলছেন, শাঁখা-তিলক গায়ে মেখে ভোট চাওয়া নাটকীয়তা মাত্র। আবার কেউ বলছেন, জুনেল হোসেন ধর্মের অটলতা দেখিয়ে ভোটের মাঠে আস্থা তৈরি করছেন। এই ধরনের প্রচার কি আদৌ ভোটারদের মন জয় করতে পারবে? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে নিছক ভোটব্যাংক পলিটিক্স? এই প্রশ্নের জবাব দেবে আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল।
তবে একটি বিষয় স্পষ্ট-ভোটের ময়দানে ধর্ম এখন কেবল বিশ্বাসের বিষয় নয়, বরং কৌশলগত অস্ত্র। শেষ পর্যন্ত সমাজ কার পাশে দাঁড়াবে? মাথায় টুপি পড়া নমাজী নেতা জুনেল, না কপালে তিলক এঁকে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া বিলাল? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে পাঠক, আপনার মতে কে এগিয়ে সমাজে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে? মতামত জানাতে পারেন পাঠকের কলামে।