
হর্ষিত দত্ত বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ৭ এপ্রিল: শ্রীভূমি (করিমগঞ্জ)জেলায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানালেন, জেলা স্কুলসমূহের পরিদর্শক তথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষাধিকারিক নীলমজ্যোতি দাস। সোমবার গভর্মেন্ট পারমিটেড প্রাইভেট স্কুলস অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে দেখা করে এক স্মারকপত্র প্রদান করেন। গত ২১ মার্চ স্কুল পরিদর্শক নীলমজ্যোতি দাস ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অর্ডারের রেফারেন্স দিয়ে নির্দেশ জারি করেন, এবার থেকে কোনও সরকারি অনুমতিবিহীন স্কুল নবম ও একাদশ শ্রেণিতে পোর্টালে নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবে না। নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হলে ডিরেক্টরের পারমিশন ও আসাম স্টেট স্কুল এডুকেশন বোর্ডের অনুমোদন লাগবে। কোনও ভেঞ্চার বা প্রাইভেট স্কুল তাদের ছাত্রছাত্রীদের নাম অন্য কোনও সরকারি বা অনুমোদিত প্রাইভেট স্কুলের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবে না।
প্রদত্ত স্মারপত্রে তাঁর এই নির্দেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। তৎসঙ্গে, জেলার সর্বত্র যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ প্রাইভেট স্কুল যত্রতত্র গজিয়ে ওঠেছে, সে-সকল অবৈধ স্কুলসমূহ উপযুক্ত তদন্তক্রমে অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জোরালো দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য, বিভিন্ন অবৈধ স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন! প্রশাসনের নাকের ডগায় নার্সারি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি কোনও অনুমতি ছাড়া-ই দিব্যি স্কুলগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওইসকল অবৈধ স্কুলসমূহের কর্মকর্তাগণ শিক্ষার নামে রীতিমতো বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সদর শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সরকারি আইন অমান্য করে ফার্নিচারের দোকানের উপরে, গাড়ির গ্যারেজের পাশে, তামাকের দোকানের উপরে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উপযুক্ত পরিকাঠামো ও উপযুক্ত শিক্ষক ছাড়া-ই এসব অবৈধ স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে। কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের ইউ-ডাইস-এর কথা বলে পারমিশনের বিষয়টি এড়িয়ে যান! এবার থেকে এসব ভুয়া ইউ-ডাইস ব্যবহারকারী স্কুলসমূহের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্কুলসমূহের পরিদর্শক তথা জেলা প্রাথমকি শিক্ষাধিকারিক শ্রী নীলমজ্যোতি দাস। প্রতিনিধি দলকে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, ডাইরেক্টরের নিবন্ধনকৃত স্কুলসমূহ ছাড়া একটি স্কুলও প্রথম শ্রেণি থেকে কোনও ক্লাসে ভর্তি দিতে পারবে না।
এমন কোনও স্কুলের খবর কারও জানা থাকলে সরাসরি তাঁর কার্যালয়ে রিপোর্ট করতে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ইউ-ডাইস কোনও পারমিশন নয়। তিনি ইতিপূর্বে কয়েকটি স্কুলের ভূয়া ইউ-ডাইস বাতিল করেছেন। তাই, যে-সকল অবৈধ স্কুল কর্তৃপক্ষ ডাইরেক্টরের নিবন্ধন ছাড়া অভিভাবকদের শুধু ইউ-ডাইস আছে বলে প্রতারিত করেন, তাদের স্কুলের নাম, ঠিকানাসহ ইন্সপেক্টর অব স্কুলস-এর কার্যালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিকদেরও দায় আছে অভিভাবকদের বোঝানোর। সঠিক দিশা দেখানোর। কোন স্কুলের পারমিশন আছে, কোন স্কুলের নেই, কোন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত, তা দেখার দায়িত্ব অভিভাবকদের। স্মারকপত্র প্রদানকালে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত প্রায় কুড়িটি স্কুলের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ স্কুলসমূহ গজিয়ে উঠার দরুন রাজ্যে প্রায় ৩৬ হাজারের অধিক সরকারি স্কুল ছাত্রছাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে! হাজার হাজার সরকারি স্কুলের একত্রিকরণ হয়েছে। আরও অসংখ্য সরকারি ও অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি স্কুলসমূহ ছাত্রছাত্রীর অভাবে ধুঁকছে! এমতাবস্থায় অবিলম্বে অবৈধ স্কুলসমূহ বন্ধ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই বলে প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা আশা ব্যক্ত করে বলেন, নতুন কর্মোদ্যম ও তরুণ ইন্সপেক্টর অব স্কুলস অচিরে-ই তাঁদের দাবি মেনে অবৈধ বেসরকারি স্কুলগুলো তদন্তক্রমে বন্ধ করে জেলায় সুস্থ শৈক্ষিক বাতাবরণ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাকালে ইন্সপেক্টর শ্রী নীলমজ্যোতি দাসের সঙ্গে প্ল্যানিং অফিসার অসিত দত্তও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনাটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।