
বিপ্র নাথ বরাকবাণী প্রতিনিধি নিলামবাজার ৭ এপ্রিল: সোমবার সকাল থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল শ্রীভূমি জেলার নিলামবাজারে। বিতর্কিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে পথে নামে হাজার হাজার ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ। প্রশাসনের তরফে মাত্র ৩০০ জনের জমায়েতের অনুমতি থাকলেও বাস্তবে সেই সংখ্যা পৌঁছে যায় পাঁচ হাজারেরও বেশি। ফলত, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরিস্থিতি এক পর্যায়ে হিংসাত্মক রূপ ধারণ করে। উত্তাল জনতা সার্কল অফিসের মূল গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে, পুলিশের ওপর চড়াও হয়, এমনকি জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে পরিস্থিতিকে কার্যত অচল করে তোলে। সকাল থেকেই নিলামবাজার মহাবিদ্যালয়ের সামনে জমতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।

অসম-ত্রিপুরা সংযোগকারী ৮ নম্বর জাতীয় সড়কে মুহূর্তেই তৈরি হয় বিশাল জনসমাগম। “নারায়ে তাকবীর”ও “আল্লাহু আকবর”ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ধর্মীয় আবেগের তীব্রতা ছুঁয়ে যায় এমন এক পর্যায়ে, যেখানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ প্রায় লুপ্ত হয়ে যায়। শুরু হয় রাস্তা অবরোধ, যার জেরে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তখনই ঘটে অঘটন। একাংশ আন্দোলনকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তুমুল ধাক্কাধাক্কি, ইট-পাটকেল, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। নিলামবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ নিশি রঞ্জন দে-কে আক্রমণ করা হয় শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করার সময়। কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভকারীরা পৌঁছায় নিলামবাজার সার্কল অফিস চত্বরে এবং সেখানকার মূল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। প্রবেশদ্বার ভেঙে দপ্তরের ভিতরে ঢুকে পড়ার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিতে গোটা এলাকাকে উত্তপ্ত করে তোলে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এক অখ্যাত সংগঠনের উদ্যোগেই এই জমায়েত সংঘটিত হয়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে তারা পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে একত্রিত করে। অথচ অনুমতি ছিল মাত্র ৩০০ জনের। এটি প্রশাসনের চোখে একটি “প্রত্যক্ষ আইন লঙ্ঘনের ঘটনা”হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় নিলামবাজারে ১৬৩ ধারা জারি করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ও সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়। প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ার মতো ব্যবস্থাও নিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এখনও পর্যন্ত দশজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আড়ালে যে কীভাবে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকলো নিলামবাজারের এই ঘটনা। ধর্মীয় আবেগে উসকানির সঙ্গে প্রশাসনিক নিয়ম লঙ্ঘন মিলে তৈরি করেছে এক অনভিপ্রেত পরিস্থিতি। এখন দেখার, সরকার ও প্রশাসন এই ঘটনার কীভাবে তদন্ত করে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।