বর্ষা আসতেই শিলচরবাসীর দুঃস্বপ্নের শুরু, নোংরা নর্দমা আর জল নিষ্কাশনের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রশাসন

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “রাস্তা তো উঁচু করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের বাড়িগুলো থেকে জল বের হওয়ার কোনো সুব্যবস্থা করা হয়নি। বর্ষার সময় সামান্য ভারী বৃষ্টি হলেই চারদিক জলমগ্ন হয়ে পড়বে। ঘরবাড়ি হয়ে উঠবে বসবাসের অযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে, উন্নয়নের নামে যদি মানুষের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তবে সেই উন্নয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বৈকি! বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় কোনো রাস্তা উঁচু করার পাশাপাশি আশপাশের এলাকার জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক। নইলে, উঁচু রাস্তাগুলো ‘জলাবদ্ধতার দেয়াল’ হিসেবে কাজ করবে, আর সাধারণ মানুষকে এর ভয়াবহ মাশুল গুনতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠছে, বর্ষা যখন আর কিছুদিনের মধ্যেই আসন্ন, তখন দ্রুত কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা? নাকি, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন বাড়িতে দুর্ভোগ পোহানোই সোনাই রোডের বাসিন্দাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে? জনগণের দাবি, অবিলম্বে সোনাই রোডের পাশে আধুনিক ও সুবিস্তৃত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক, যাতে বর্ষার সময় নির্বিঘ্নে জল নিষ্কাশন সম্ভব হয়। নইলে, সড়ক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশার শিকার হবেন। সময় থাকতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এখন এলাকাবাসীর একমাত্র কামনা।

     শুধু শহর নয়, এবার আরও বড় বিপদের মুখে পড়তে চলেছে শিলচর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ তো হয়ইনি, বরং বছরের পর বছর কেবল আশ্বাসের ফুলঝুরি ছাড়া বাস্তব কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরাক নদী ও সংলগ্ন অন্যান্য জলাশয়গুলির ওপর লাগাম পরানোর মতো কার্যকর কোনো বাঁধ আজও নির্মিত হয়নি। ফলে আবারও আশঙ্কা, সামান্য অতিবৃষ্টিতেই জল উপচে পড়বে, আর নিমেষে ডুবে যাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা।

প্রতিবার বর্ষা মৌসুমের আগমনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় — ‘চলছে পরিকল্পনা’, ‘শীঘ্রই কাজ শুরু হবে’, ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সামান্য বৃষ্টিতেই শিলচরের রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়। কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও বা কোমরসমান জল জমে সাধারণ মানুষের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার ওপর ভাসমান দোকানপাট, ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়া — যেন নিয়মিত দৃশ্যপট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের স্মৃতি আজও তাজা। সে সময়কার বন্যায় শিলচর চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। হাজার হাজার মানুষ দিনের পর দিন জলবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছিলেন। অগণিত মানুষ তাদের আশ্রয় হারিয়েছিলেন, আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েক কোটি টাকারও বেশি। অথচ, সেই সময়কার করুণ অভিজ্ঞতা থেকেও প্রশাসন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এবারও চিত্র অভিন্ন। বাঁধ মেরামত হয়নি, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি, এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য কোনো বিকল্প পরিকল্পনাও দেখা যায়নি। এক কথায়, জনগণের দুর্ভোগ যেন নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর এই গাফিলতির মাশুল দিতে হতে পারে সাধারণ জনগণকেই — যাদের জীবন-জীবিকা বর্ষা নামলেই হুমকির মুখে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তাই উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন — আমরা কি আবার ২০২২ সালের মতো দুর্ভোগের জন্য প্রস্তুত? নাকি এবার আর বাঁচার কোনো উপায়ও থাকবে না? 

  • Related Posts

    শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

    ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…