বরাকের তিন জেলার আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে সরকারি স্বীকৃতিহীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান!

তারা প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম, ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভুয়ো সনদ প্রদান করছে। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে বিশাল পরিমাণ অর্থ আদায় করছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো নির্দিষ্ট ভবন বা স্থায়ী পরিকাঠামো ছাড়াই শুধুমাত্র একটি ঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে ব্যবসা চালানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে গাফিলতি। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে বরাক উপত্যকায় শিক্ষার মান আরও নিম্নগামী হবে এবং শিক্ষার নামে প্রতারণার এই রমরমা ব্যবসা চলতেই থাকবে। শিক্ষা ও প্রশাসন বিভাগের উচিত অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। একইসঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি, যাতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এসব ভুয়ো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না করান। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুললে গোটা সমাজ তার মাশুল দেবে।

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার, আর সেই শিক্ষার পরিকাঠামো যদি অবৈধ এবং প্রতারণামূলক হয়, তবে তা এক চরম উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রতি শিক্ষা পরিদর্শকের বিভাগের এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে যে অনুমোদনহীন বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই স্বীকৃতিহীন ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন—এই ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যাঙের ছাতার মত দ্রুত বিস্তারের পেছনে দায়ী কে? প্রশাসনের ব্যর্থতা, না অভিভাবকদের অসচেতনতা? আজকের দিনে শিক্ষা শুধুমাত্র একটি মৌলিক অধিকারই নয়, এটি একটি বিশাল ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠছে বিনা অনুমোদনে, যথাযথ পরিকাঠামো ছাড়া, এমনকি অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা স্বপ্ন দেখেন তাঁদের সন্তান একটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করবে, কিন্তু অজ্ঞতার কারণে তাঁরা পড়ে যান প্রতারণার জালে। এই সমস্ত অনুমোদনহীন বিদ্যালয় বছরের পর বছর চালু থাকে কীভাবে? এটি কি প্রশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতা নয়? যদি এগুলো অবৈধ হয়, তবে আগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? কেন এতদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানগুলি খোলা থাকলো, এবং এত শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হলো? প্রশাসনের কার্যকারিতার অভাবই কি এই ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশের প্রধান কারণ? অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রশাসনকে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও শিক্ষার্থী প্রতারিত না হয়। পাশাপাশি, অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া উচিত এবং প্রতিষ্ঠানের বৈধতা সম্পর্কে যথাযথ খোঁজখবর নেওয়া উচিত। প্রশ্ন হলো শিক্ষা কি শুধুই ব্যবসা হয়ে উঠছে, নাকি এটি এখনো এক মহৎ ব্রত? প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছাড়া, এবং জনগণের সচেতনতা ছাড়া, এই ভুয়ো প্রতিষ্ঠান রোধ করা আদৌ সম্ভব কি?

বর্তমান সময়ে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু যখন সেই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই প্রতারণার ছায়া পড়ে, তখন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ভুয়ো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে, যারা সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছে তাদের কার্যকলাপ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে— তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুয়ো সনদ প্রদান করছে। এই ধরনের ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সাধারণত নির্দিষ্ট ভবন বা স্থায়ী পরিকাঠামো ছাড়াই গড়ে ওঠে।

কোনো একটি ভাড়া করা ঘর বা ছোট অফিস নিয়ে তারা বিশাল আকারের বিজ্ঞাপন দেয়, যেখানে পড়াশোনার সু-ব্যবস্থা, অভিজ্ঞ শিক্ষক, স্বীকৃত সিলেবাস ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের টোপ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম অস্ত্র হলো— চকচকে ওয়েবসাইট, আকর্ষণীয় ব্রোশিওর এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু সরকারি বা আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমোদনের ভুয়ো সিল লাগিয়ে তারা ভুয়ো সনদ সরবরাহ করছে। এসব সনদ পরে চাকরি বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অকেজো প্রমাণিত হয়। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ পড়ে যায় গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে।

শুধু ভুয়ো সনদ দেওয়াই নয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশাল পরিমাণ অর্থ আদায় করে। অনেকে প্রথম দিকে বুঝতেই পারেন না যে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। যখন চাকরি বা উচ্চশিক্ষার সময় আসে, তখন বোঝা যায় যে তাদের হাতে থাকা সনদ এক টুকরো কাগজ ছাড়া কিছুই নয়। এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করা উচিত যে সেটি সরকারি স্বীকৃতপ্রাপ্ত কি না। সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত অনুমোদন রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। শিক্ষা একটি জাতির ভবিষ্যৎ। অথচ যদি সেই শিক্ষার মধ্যেই ভুয়ো প্রতিষ্ঠানের অন্ধকার ছায়া পড়ে, তবে তা জাতির ভবিষ্যৎকেই অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। তাই সময় থাকতেই সরকার ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

  • Related Posts

    মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

    শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…