
বরাকবাণী প্রতিবেদন কাবুগঞ্জ ৫ এপ্রিল: সোনাই থানার অন্তর্গত দক্ষিণ সৈদপুর জিপির শিলডুবির এলাকার ২ সন্তানের জননীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে কাছাড় জেলা আদালত অভিযুক্ত স্বামিকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২২শে জুলাই ২০২৩ ইংরেজি শনিবার তারিখে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় কাছাড় জেলার সোনাই থানার অধিনস্থ দক্ষিণ সৈদপুর জিপির শিলডুবি এলাকার, ধনেহরি দ্বিতীয় খন্ড গ্রামে। নিজের সন্তানদের সামনে স্ত্রী আলিফা বেগম বড়ভুইয়াকে(২৯)দা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংস হত্যা করে আনোয়ার হুসেন বড়ভুইয়া (৩২)।
ঘটনার বিবরণ মতে, ঘটনার আগের দিন শুক্রবার বিকালে ২সন্তানের জননী আলিফা বেগম তার বাবার জঠিল রোগের খবর পেয়ে বাবার বাড়িতে যান, রাতে সেখানেই ছিলেন। খুব সকালে আনোয়ার তার স্ত্রী আলিফাকে ফোন যোগে বাড়িতে ডাকেন৷ স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে ২ সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছেন। বাড়িতে আসলে কোনো একটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়।
এক সময় সেই বাকবিতন্ডা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। ঘরের ভিতরে সন্তানদের সামনে আনোয়ার হোসেন দা হাতে নিয়ে স্ত্রীর ঘাড়ে সজোরে কয়েকটি আঘাত করে, সেই আঘাতে স্ত্রীর মাথার চুল ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে চিৎকার করে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির আঙিনায় বাসের চাটাইয়ের উপর লুটিয়ে পড়লে, সেখানে আবার ও দা দিয়ে উপর্জুপরি কুপ বসায় আনোয়ার। ঘটনাকে প্রত্যেক্ষ করে পাড়া প্রতিবেশীরা বাঁধা প্রদান করলেও তাদের দিকেও দা ঘুরায় আনোয়ার। মূহুর্তের মধ্যেই আলিফা অধিক রক্তক্ষরণের ফলে প্রাণ হারান আলিফা বেগম। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সোনাই থানার তৎকালীন ডব্লিউ,এস,আই মৌমিতা নাথ সদলবল উপস্থিত হন। এবং উপস্থিত হন সোনাই থানার ওসি অভিজিৎ কুমার বরুয়া ও।
পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করলে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মেজিট্রেট তথা সোনাই উন্নয়ন খণ্ড আধিকারিক মোহাম্মদ মুবিন। তিনি ঘটনার সম্পূর্ণ দিক খতিয়ে দেখেন এবং ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন হত্যায় ব্যাবহৃত অস্ত্র সহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করেন। এবং মেজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে ঘটনার পরবর্তী সময়ে আনোয়ার জনরোষে পড়ে এবং পালিয়ে গিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করে। সোনাই থানায় সে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে নিজেই জানায়, সে তার পত্নীকে হত্যা করে এসেছে। তারপর সোনাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় বিভিন্ন মহল থেকে ঘাতক আনোয়ারকে ফাস্ট ট্রেক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এদিকে আলিফার বাবার বাড়ির তরফে আনোয়ারকে অভিযুক্ত করে সোনাই থানায় কেইস নং ১১৭/২০২৩ মামলা রুজু হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অসি অভিজিৎ বরুয়ার নেতৃত্বে সেই ঘটনার সম্পুর্ণ তদন্ত নিখুঁতভাবে করেন ডব্লিউ এস আই মৌমিতা নাথ। মৌমিতা নাথের তদন্তের চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর আদালত মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে এবং বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে আদালত আনোয়ার হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। এখবর ছড়িয়ে পড়তেই ডব্লিউ এস আই মৌমিতা নাথকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হচ্ছে।