
হর্ষিত দত্ত বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ৩রা এপ্রিল: নির্বাচন পরিচালনার কাজে করিমগঞ্জ কলেজকে ব্যবহার না করার আবেদন জানিয়ে দেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে স্মারকপত্র প্রেরণ করেন শ্রীভূমি শহরের বিশিষ্টজনেরা।স্মারকপত্রের প্রতিলিপি রাজ্য নির্বাচন আধিকারিক এবং শ্রীভূমি জেলা নির্বাচন আধিকারিক কাছে প্রেরণ করা হয়। পঞ্চায়েত, বিধানসভা বা লোকসভার নির্বাচন পরিচালনার কাজে করিমগঞ্জ কলেজকে ব্যবহার না করার আবেদন জানানো হয় প্রেরিত স্মারকপত্রে। ডাক এবং ইমেইল যোগে দেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে প্রেরণ করা স্মারকপত্রে এ অঞ্চলের বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী এবং কলেজের অন্যান্য কর্মচারি সহ কলেজের স্থায়ী পরিকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক সমূহের কথা উল্লেখ করা ।
তারা জানান দীর্ঘদিন থেকে প্রতিটি পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে কলেজের খেলার মাঠ এবং ভবন সমূহ সমেত করিমগঞ্জ কলেজ নির্বাচন পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রচুর ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে, এ অঞ্চলের নমস্য এবং পূজনীয় ব্যক্তিরা যে মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে করিমগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, প্রতিটি পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে করিমগঞ্জ কলেজ ব্যবহৃত হবার ফলে সেই মহান উদ্দেশ্য ভীষনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।তাছাড়া বিভিন্ন নির্বাচন পরিচালনা প্রক্রিয়ার শুরু থেকে ভোট গণনা এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময়, কলেজ নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে।
ফল স্বরূপ প্রতিটি পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে, দীর্ঘ দিন কলেজের স্বাভাবিক শৈক্ষিক এবং অন্যান্য কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। প্রতিটি পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলার সময় জেলা নির্বাচন আধিকারিকের নির্দেশে একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য করিমগঞ্জ কলেজ অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয় শহরের অন্য কোনো স্কুলে। কিন্তু স্কুলের সীমিত পরিসরে কলেজের সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা উপলব্ধ নয় বা সায়েন্স ল্যাবরেটরি সহ কলেজে উপলব্ধ সকল সুযোগ-সুবিধা অস্থায়ীভাবে সেখানে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না।তাছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-এর অধীনে চার বৎসরের স্নাতক পাঠ্যক্রমে পাঠরত বিভিন্ন সেমিষ্টারের ছাত্রছাত্রীরা নির্বাচনের জন্য কলেজের নির্ধারিত থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস থেকে যেমন বঞ্চিত হয় তেমনি অসম্পূর্ণ পাঠ নিয়েই অবতীর্ণ হতে হয় পরীক্ষায়।ফলে ছাত্রছাত্রীদের সারা জীবনের জন্য এক বিশাল অপূরণীয় ক্ষতি সম্মুখীন হতে হয় বলে স্মারকপত্রে উল্লেখ করেন বিশিষ্টজনেরা।
কখনো আবার জেলা নির্বাচন আধিকারিকের নির্দেশে, নির্বাচনের প্রয়োজনে আসা নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় কলেজের জন্য পূর্বনির্ধারিত স্কুল ছেড়ে যেতে হয় অন্য এক বা একাধিক স্কুলে।চূড়ান্ত পরীক্ষা চলাকালীন চরম এই অব্যবস্থা এবং বিশৃঙ্খলায় সাধারণভাবে হয়রানির শিকার হয় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী এবং অন্যান্য কলেজ কর্মচারি সহ শহরের বাইরে থেকে বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের।তাছাড়া প্রতিটি পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার সময় অস্থায়ীভাবে কলেজের প্রেক্ষাগৃহে স্ট্রং রুম, কলেজের অন্যান্য কক্ষ সমূহে ভোট গণনা কেন্দ্র, কলেজ মাঠে ভোট সামগ্রী বিতরণ ও সংগ্রহ কেন্দ্র, শৌচালয় ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়। এর ফলে কলেজ মাঠের স্থায়ী পরিকাঠামোর অপূরণীয় ক্ষতি হয় বলে জানান তারা।করিমগঞ্জ কলেজ বয়েজ’ হোস্টেল এবং করিমগঞ্জ কলেজ গার্লস’ হোস্টেল(রোলাণ্ডস মেমোরিয়েল গার্লস’ হোস্টেল) করিমগঞ্জ কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই অবস্থিত।
এ অবস্থায়, প্রতিটি নির্বাচনের সময় কলেজ হোস্টেলের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের নিজেদের স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনায় অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয়।করিমগঞ্জ কলেজের মতো একই নির্বাচনকেন্দ্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ২০১৪ সালে নগাঁও কলেজ পরিচালন সমিতি, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। এই মামলায় জয় হয়েছিল নগাঁও কলেজ পরিচালন সমিতির।
ফলে বৃহত্তর সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে, করিমগঞ্জ কলেজকে ছাড় দিয়ে ভবিষ্যতে পঞ্চায়েত, বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার কাজে ভবন সমূহ সমেত জেলা ইন্ডোর স্টেডিয়াম বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রকে(সুতারকান্দি) ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।পাশাপাশি শ্রীভূমি সহ দেশের অন্যান্য জেলা,সমজেলা,মহকুমা সদরে সরকারি জমিতে প্রয়োজনীয় প্রাঙ্গণ ও ভবনকে স্থায়ী নির্বাচন পরিচালনা কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান স্মারকপত্রে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা করিমগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সুধাংশু শেখর দত্ত, অধ্যাপক ড. শান্তনু দত্ত, অধ্যাপক সৌমিত্র চৌধুরী, অধ্যাপিকা ড. মনোলিনা নন্দী রায়, প্রাক্তন অধ্যাপক নির্মল সরকার, প্রাক্তন প্রাধান শিক্ষক সুহাস রঞ্জন দাস, চিকিৎসক তথা সমাজকর্মী ডা: মৃন্ময় দেব, সরস্বতী স্কুলের প্রধান আচার্য অঞ্জন গোস্বামী, মহর্ষি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিবাকর দাস, আইনজীবি সুব্রত (শ্যামা) পাল, শিশির দে, প্রদীপ মোদক, সমাজর্মী অপু বনিক, রূপক দে, কিশলয় কর, প্রবাল আচার্য, সুজিৎ সর্দার, রতন ঘোষ, অরিন্দম রায়, প্রমুখ স্মারকপত্র দেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক,রাজ্য নির্বাচন আধিকারিক সহ অন্যদের প্রেরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।