সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কার্বি আংলঙে চলছে রেট-হোল মাইনিং

বরাকবাণী প্রতিবেদন, গুয়াহাটি, ২৯ জানুয়ারি: সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কার্বি আংলং জেলায় কয়লার অবৈধ খনন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসম জাতীয় পরিষদের এক প্রতিনিধিদল কার্বি আংলংয়ের অবৈধ কয়লাখনি এবং কয়লা মজুত করে রাখা দিসাই, সানিলাংস এবং লাংমিলির কয়লাজান ইত্যাদি অঞ্চল পরিদর্শনের সময় এই বিষয়টি নজরে পড়েছে। দেশ কাঁপানো উমরাংশু ট্র্যাজেডির পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অসম পুলিশের সদ্য বিদায়ী ডিজিপি জিপি সিং সমগ্র রাজ্যে অবৈধ কয়লাখনন বন্ধের নির্দেশকে কার্বি আংলং প্রশাসন গুরুত্বই দেয়নি। এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখে অসম জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জগদীশ ভূঞার মন্তব্য, ‘দিসপুরের পৃষ্ঠপোষকতায় কার্বি আংলংয়ে চলছে অবৈধ কয়লার সাম্রাজ্য।’ শীঘ্রই এই অবৈধ কয়লা খনন বন্ধ করার পাশাপাশি অবৈধ কয়লা খনন করানোর মূল কুশীলবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। কয়লার অবৈধ খনন থেকে সরবরাহ, ওভারলোড কয়লা পরিবহনকারী লরি চালানোর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি সরকারি আমলা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জগদীশ।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, খনি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই কয়লার কালো টাকায় পকেট গরম করছেন। এবার বিষয়টি সামনে এনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ভূঞা। একইভাবে অবৈধ কয়লা ক্রয় করা সিমেন্ট কোম্পানি, ইটভাটা, অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, রাজ্যের অবৈধ কয়লা খননের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন জগদীশ ভূঞা। কার্বি আংলংয়ের অবৈধ কয়লাখনিতে প্রকৃতি ধ্বংসের চিত্র দেখে এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অসম জাতীয় পরিষদ সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যাওয়া এপিএইচএলসি-এর সভাপতি জন ইংতি কাথারও কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের প্রধান নির্বাহী তুলিরাম রংহাং এবং জেলা প্রশাসন সরাসরি এই কালো বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।

এর আগে রাজ্য সরকার কয়লার কালো বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করে আসলেও উমরাংশু কাণ্ড রাজ্যে ব্যাপক হারে কয়লার কালো বাণিজ্য চলার তথ্য উন্মোচিত করে। এরপরই অসমে চলমান অবৈধ কয়লা খনন নিয়ে কঠোর হয়েছে গৌহাটি হাইকোর্ট। অবৈধ কয়লা খনন নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। উচ্চতম আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অসমে চলমান অবৈধ কয়লা খনন নিয়ে রাজ্য সরকারকে জবাবদিহি করতে বলেছে হাইকোর্ট। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্য সরকারকে শপথনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উচ্চতম আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও অসমে কীভাবে এত বিশাল পরিসরে কয়লার অবৈধ বাণিজ্য চলছে? কেন রেট-হোল মাইনিং বন্ধ করতে সরকার ব্যর্থ হল? প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার কেন ব্যর্থ হল? শপথনামার মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে এসব বিষয়ে হাইকোর্টকে জানাতে হবে। তবে ৭ ফেব্রুয়ারির আগে রাজ্য সরকার আদালতে শপথনামা জমা দেয় কি না, সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকবে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে লিডু, মার্ঘেরিটা, লেখাপানি, উমরাংশুসহ রাজ্যে প্রায় শতাধিক রেট হোল মাইনিং চলার পরও অসম সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উচ্চতম আদালত এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ কয়লা খনন এবং পরিবহনের সিন্ডিকেট চলছে অসমে। উমরাংশুতে এমন একটি অবৈধ রেট হোল মাইনিংয়ে আটকে পড়ে ৯ জন শ্রমিকের মৃত্যুর পর এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সেই স্থানে আটকে পড়া সকল শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করতে না পেরে রাজ্য সরকার মানতে বাধ্য হয়েছিল যে রাজ্যে কয়লার অবৈধ খনন চলছে।

উমরাংশুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর অসম পুলিশের ডিজিপি জি পি সিং ঘোষণা করেন যে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজ্যে চলমান সকল অবৈধ কয়লা খনন বন্ধ করবে পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু রাজ্য সরকারের নির্দেশের পরেও কাৰ্বি আংলঙে অবৈধ কয়লা খননের ঘটনা সামনে আসায় সরকারের মাথায় থাকা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অসম জাতীয় পরিষদ প্রথম নয়, এর আগেও রেট হোল মাইনিং বন্ধ করতে বিভিন্ন দল ও সংগঠন সোচ্চার হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার এই ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এবার ফের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কী পদক্ষেপ করেন, সেটাই দেখার।

  • Related Posts

    মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

    শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…