
বরাকবাণী প্রতিনিধি,পরিতোষ পাল,ধর্মনগরঃ২৮ জানুয়ারিঃ উওর ত্রিপুরার যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার উদ্যোগে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য গুন সম্পূর্ণ এই কালো চালের পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পেয়েছে উপতাখালি গ্রাম পঞ্চায়েত ও বালিধুম এডিসি ভিলেজের কৃষকরা। সম্প্রতি যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার উদ্যোগে উপতাখালি বাজারে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কৃষকদের উৎপাদিত এক হাজার পাঁচশো কেজি কালো চাল বহিঃ রাজ্যে রপ্তানি করা হয়। অনুস্টানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিধায়িকা মলিনা দেবনাথ, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুবরাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান সমরেন্দ্র দেবনাথ, জেলা পরিষদের সদস্য শ্রীপদ দাস, যুবরাজনগর কৃষি তত্বাবধায়ক বিজন কান্তি শর্মা, জেলার কৃষি দপ্তরের সহ-অধিকর্তা নিরঞ্জন দাশগুপ্ত, হর্টিকালচারের উপ-অধিকর্তা মনোজিৎ মজুমদার সহ অন্যান্যরা। বিশ্বের প্রতিটি সচেতন নাগরিকই বর্তমানে সুস্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিচ্ছে। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গেলে সব চাইতে বড় উপাদান হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্য। গবেষনায় দেখা গেছে কালো চালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুন এবং এটি অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর। বিশেষভাবে দেখা গেছে কালো চালে অন্যান্য চালের তুলনায় প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, এছাড়াও কালো চালে প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন এবং ফলিক অ্যাসিড থাকে। এই কালো চালে বাদামী চালের চেয়েও বেশি প্রোটিন থাকে। বিশ্বব্যাপী এই কালো চালের এখন প্রবল চাহিদা। রাজ্যের বড় বড় শপিংমল গুলিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই কালো চাল। কালো চাল উৎপাদন করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে রাজ্যের কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে উত্তর জেলার যুব রাজনগর কৃষি মহকুমা। যুবরাজনগর কৃষি মহকুমা কার্যালয় গঠনের এখনো এক বছর পূর্ন হয়নি। এই কৃষি মহকুমার কৃষি তত্ত্বাবধায়ক বিজন কান্তি শর্মা এলাকায় কৃষি দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কৃষকরা বিজ্ঞান ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুবরাজনগর কৃষি মহকুমায় প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে কালো চাল চাষ শুরু হয়। আতমা প্রকল্পের অধীন SMAE এক্সটেনশন কর্মসূচিতে প্রথমে ২৮ জন কৃষককে নিয়ে উপতাখালি পঞ্চায়েতে একটি ফার্ম স্কুল চালু করা হয় কালো চাল উৎপাদনের জন্য। দপ্তরের পক্ষ থেকে ২৮ জন কৃষককে এক কেজি করে কালো চালের বীজ সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি আতমা প্রকল্পের অধীনে কৃষি প্রদর্শন মূলক চাষ হিসেবে প্রতি একরে ৪ হাজার টাকা করে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া বালিধুম এডিসি ভিলেজে ১০ জন কৃষক কালো চাল চাষ শুরু করে। বালিধুম এলাকায় আউশ সিজনে এবং উপতাখালি এলাকায় আমন সিজনে কালো চালের পরীক্ষামূলক চাষ হয়। প্রায় তিন হেক্টর জমিতে এই কালো চাল চাষ করা হয়। দেখা গেছে আমন সিজনে এবং তুলনামূলক উচু জমিতে চাষ করা কালো চালের অধিক ফলন পেয়েছে কৃষকরা। প্রথমবারের এই পরীক্ষামূলক চাষে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কেজি কালো চাল উৎপাদন হয় যা অন্যান্য সুগন্ধি চালের থেকে অনেকটাই বেশি।

যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার প্রচেষ্টায় এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কৃষকদের উৎপাদিত দেড় হাজার কেজি কালো চাল প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বহিঃ রাজ্যে রপ্তানি করা হয়। এই বিক্রয় মূল্য সাধারণ ধান থেকে প্রায় চার গুণ বেশি, স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কৃষকরা। আগামী দিনে যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার অধীন অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও এই কালো চাল উৎপাদনে এগিয়ে আসবেন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা। আলোচনা করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধক প্রাক্তন বিধায়িকা মলিনা নাথ যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার কৃষি তত্ববধায়ক বিজন কান্তি শর্মার ভুয়ষী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন শুধুমাত্র দফতরের আধিকারিক কিংবা কর্মী নয় এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসতে হবে যেন কৃষকরা সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও প্রকল্পের লাভ গ্রহণ করতে পারেন। সোমবার যুবরাজনগর কৃষি মহকুমা কার্যালয় পরীক্ষামূলকভাবে কালো চাল চাষে কৃষকদের সফলতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে কৃষি তত্ববধায়ক বিজন কান্তি শর্মা বলেন, এবছর কৃষকরা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কেজি চাল উৎপাদন করেছে। এই চাষের সফলতায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি কৃষকরা। কালো চালের ভালো বাজার দর পেলেও দেড় হাজার কেজি বিক্রি করেছে কৃষকরা। আগামী বছর অধিক পরিমাণে চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষকই বীজ রেখে দিয়েছে। তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন উপতাখালী সহ তার আশপাশের গ্রাম গুলিতেও আগামীদিনে এমন সিজনে কালো চালের চাষ বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবেন।