শ্রীভুমি জেলার ফকিরবাজারের ‘ড্রিমল্যান্ড ইংলিশ একাডেমি অনুমতিহীন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতারণার অভিযোগ

বেআইনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

ড. নিখিল দাশ: বরাকবাণী,শিলচর,২৭ জানুয়ারিঃ শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড, কিন্তু সেই শিক্ষাই যদি প্রতারণার শিকার হয়, তাহলে সমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতারণা নতুন নয়, তবে এটি থামারও নাম নিচ্ছে না। ফকিরবাজার, জেলা-শ্রীভূমিতে অবস্থিত একটি অনুমতিহীন প্রতিষ্ঠান, ‘ড্রিমল্যান্ড ইংলিশ একাডেমি’, একে কেন্দ্র করেই সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বৈধ কোনো অনুমতি বা সরকারি নথিপত্র ছাড়াই এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা প্রদান করছে বলে জানা গেছে।

শ্রীভূমি জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস থেকে সম্প্রতি এক আর টি আই জবাবে এই ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ড্রিমল্যান্ড ইংলিশ একাডেমি নামে কোনো স্কুল সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়। বিদ্যালয় পরিদর্শকের নথিতে এই স্কুলের অস্তিত্ব নেই। আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ কখনোই বৈধ অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।

ড্রিমল্যান্ড ইংলিশ একাডেমি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, এটি কোনো বৈধ নথিপত্র ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র শিক্ষার গুণগত মানকে ক্ষুণ্ন করছে না, অভিভাবকদেরও চরমভাবে প্রতারণার শিকার করছে। অভিভাবকেরা স্বপ্ন দেখেন, তাদের সন্তানরা একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে জীবনে উন্নতি করবে। কিন্তু যখন এই স্বপ্ন ভেঙে যায়, তখন তার প্রভাব শুধু একটি পরিবারের ওপরেই নয়, পুরো সমাজের ওপর পড়ে। ড্রিমল্যান্ড ইংলিশ একাডেমির মতো ভূয়ো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিক্ষার নামে এই প্রতারণা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় নয়, এটি আইনবিরোধী কাজও। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে যে, তারা অভিভাবকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভর্তি ফি ও অন্যান্য খরচ আদায় করছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো সরকারি স্বীকৃতি, নেই কোনো নিবন্ধন। ফলে এখান থেকে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের সনদপত্র ভবিষ্যতে কোনো কাজে আসবে না।

প্রশ্ন ওঠে, প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন একটি বেআইনি প্রতিষ্ঠান কীভাবে বছরের পর বছর চালু রয়েছে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই বিষয়টি এতদিন এড়িয়ে গেল? অভিভাবক ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

ড্রিমল্যান্ড ইংলিশ একাডেমি প্রতিষ্ঠান শিক্ষাক্ষেত্রে বেআইনি কার্যক্রম চালানোর জন্য আলোচনায় এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করে আসছে এবং সঠিকভাবে পাঠদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। একাডেমির পেছনে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের নেওয়ার দাবি করেছেন সচেতন নাগরিক। প্রশাসন যদি সময়মতো সক্রিয় ভূমিকা পালন না করে, তাহলে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সমাজের জন্য বড় বিপদ হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে, এসব ভূয়ো প্রতিষ্ঠান নির্মূল করা।

বর্তমান সময়ে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অন্যতম কারণ হলো ভুয়ো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য। অভিভাবকরা যখন তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান, তারা বিশ্বাস করেন যে সেখানে সঠিক ও বৈধ শিক্ষা দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক প্রতিষ্ঠানই এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যাদের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ ধরনের বেআইনি প্রতিষ্ঠানগুলো কেবলমাত্র আইন অমান্য করেই নয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো স্বীকৃতি বা অনুমোদনপত্র নেই। অথচ তারা স্বাভাবিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করছে। যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভালো শিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন, তারা কল্পনাও করতে পারেন না যে তাদের সন্তান এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পড়ছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রলোভন দেখিয়ে অভিভাবকদের ভুল বোঝায়, আর শেষমেশ শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে এমন একটি সার্টিফিকেট নিয়ে, যা কোনো মূল্য রাখে না।

প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া নয়, সাধারণ মানুষকে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চেহারা সম্পর্কে জানানো, যাতে তারা প্রতারিত না হয়, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম, এবং এর সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা যেন না হয়, তবে এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ ছাড়া কোনো উপায় নেই। এগিয়ে আসতে হবে জনগণকেও, এবং সকলকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো শিক্ষার্থী এমন প্রতারণার শিকার না হয়। 

  • Related Posts

    মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

    শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

    বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…