
বরাকবাণী প্রতিবেদনঃশিলচরঃ২০ জানুয়ারিঃ শিলচরের কাছে কল্যাণী সংলগ্ন দেবচার বাংলাঘাটে রেশন সামগ্রী বণ্টনে কারচুপি ও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে রবিবার দেবচার গ্রামের মন্দিরে এক প্রতিবাদী সভার আয়োজন করেন। এই সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল রেশন সামগ্রী বণ্টনের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবী দ্বিজেন্দ্র সিংহ (বসু)। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য রামকৃষ্ণ সিংহ, রাঙ্গিরখাড়ি-ভজন্তিপুর কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ সিংহ, সমাজসেবী সুরেন্দ্র দাস, বাংলাঘাটের পূর্বতন ডিলার সুনীল দত্ত এবং রাধাকান্ত সিংহ। বক্তারা অভিযোগ করেন, রেশন সামগ্রী সঠিকভাবে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে না। অনেক সময় নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করা হয় এবং পরিমাণও কম থাকে। এছাড়া, রেশন কার্ডধারীরা তাদের প্রাপ্য সামগ্রী না পাওয়ার জন্য ডিলারের অসৎ মনোভাবকে দায়ী করেন। প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য রামকৃষ্ণ সিংহ বলেন, “সরকারের তরফ থেকে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করা হলেও কিছু অসাধু ডিলারের কারণে এটি ভেস্তে যাচ্ছে।” একই কথা তুলে ধরে দেবপ্রসাদ সিংহ বলেন, “দুর্নীতিগ্রস্ত ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
এদিন সভায় স্থানীয় রেশন ডিলারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে গ্রাহকরা জোরালো দাবি জানিয়েছেন। সভায় প্রস্তাব গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, দুর্নীতিগ্রস্ত ডিলারকে অবিলম্বে অপসারণ করে নতুন ডিলার নিয়োগের প্রস্তাব জেলা কমিশনার, খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগ এবং সমবায় সমিতির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হবে। বক্তারা
জানান, বর্তমান ডিলার সুনীল দত্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে উত্তম দাস নামের এক ব্যক্তিকে রেশন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উত্তম দাস নানা দুর্নীতির মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় গ্রাহকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, মাথাপিছু নির্ধারিত রেশনের চেয়ে অনেক কম রেশন দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অনেকের বৈধ রেশন কার্ডও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় রেশন ডিলার উত্তম দাসের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট এলাকার একাংশ রেশন গ্রাহক দাবি করেছেন, উত্তম দাসের পরিবর্তে সমাজসেবী লীলা সিংহকে রেশন ডিলারের দায়িত্ব দেওয়া হোক। এ নিয়ে তারা জেলা কমিশনার ও সমবায় সমিতির কাছে একটি প্রস্তাব জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, ডিলার উত্তম দাস নিয়মিত রেশনের মাল সরবরাহে অনিয়ম করছেন। অনেক সময় নিম্নমানের খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে রেশনের পণ্য সময়মতো পাওয়া যায় না। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই রাজ্যের খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী রঞ্জিত দাসের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। এদিন এক সভায় গ্রাহকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, শীঘ্রই ডিলার পরিবর্তন না হলে তারা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ দায়ের করবেন।
এদিনের সভায় উপস্থিত গ্রাহকরা সরাসরি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জানান, রেশন না পাওয়ার কারণে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকরা আগে শিলচরের খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগে লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও, সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে দুর্নীতির অভিযোগ আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। সভায় বক্তারা দুর্নীতির এই বিষয়টি অবহেলা করার জন্য খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগের তীব্র সমালোচনা করেন।
সভায় উপস্থিত গ্রাহকরা জানান, যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হয়, তবে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। তাঁদের দাবি, সরকারি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। অতীতে বাংলাঘাটের রেশন ডিলার সুনীল দত্তের সময়ে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়নি বলেও সভায় উল্লেখ করা হয়। এলাকাবাসী চান, প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সঠিক বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুক। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং প্রশাসন জনগণের এই ন্যায্য দাবি মেনে কী পদক্ষেপ নেয়। গ্রামবাসীদের আশা, প্রশাসন তাদের কথা শুনে সঠিক ও ন্যায্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।