
হাসপাতালের নার্সের দায়িত্ব জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে নবজাতকের অর্ধেক মস্তিষ্ক ড্যামেজ, সিটি স্ক্যান রিপোর্টে হাসপাতাল ইনচার্জ ডঃ সুরেন্দ্র সিংহ অভিযুক্ত নার্সদেরকে আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ
ড. নিখিল দাশঃ, বরাকবাণী, শিলচরঃ ১১ জানুয়ারিঃ সোনাই হাসপাতালের নিন্দনীয় ও এক মর্মান্তিক ঘটনার শিকার এক নবজাতক। জানা গেছে, সুস্মিতা দাশ নামের এক মায়ের প্রসবকালীন সময়ে অসতর্কতার কারণে শিশুটি নার্সের হাত থেকে ডাস্টবিনে পড়ে যায়। এর ফলে শিশুটির মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং বর্তমানে তার মগজের অর্ধেক অংশ বিকল হয়ে গেছে।
২৪ ডিসেম্বরের এই ঘটনার পর থেকেই শিশুটি অসার হয়ে পড়ে। সোনাই হাসপাতালের নার্সরা প্রসবের জন্য ১,০০০ টাকা ঘুষ দাবি করলে, পরিবারের সঙ্গে নার্সরা বিতর্ক তর্কে জড়িয়ে পড়েন। শেষে ৬০০ টাকা দেওয়ার পর তারা প্রসবের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু এই ঘুষ নেয়া ও দায়িত্বে অবহেলার মাশুল দিতে হচ্ছে এক নিষ্পাপ শিশুকে।
শনিবার ১৯ দিনের এক নবজাতকের সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে মস্তিষ্কের গুরুতর ক্ষতির বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির অর্ধেক মস্তিষ্ক ড্যামেজ হয়ে গেছে। জখমের জায়গা থেকে এখনও পুঁজ বের হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। চিকিৎসকদের মতে, শিশুটি যদি বেঁচেও থাকে, তবে তাকে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সম্ভাবনা রয়েছে যে সে কালা ও বোবা হয়ে যাবে। স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার কারণে দাঁড়ানো বা হাঁটা শিখতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। তবে শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আঘাতের পর শিশুটিকে সকাল ৮টায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিকেল ১টায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এত দেরিতে চিকিৎসা শুরুর কারণে ডাক্তাররা সন্তোষজনক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। শিশুটির মাথায় পুঁজ জমা থাকায়, তার মগজে গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যদি সে বেঁচেও থাকে, তবে কালা ও বোবা হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক চলাফেরার জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে শিশুটির চিকিৎসায় ইতোমধ্যে ৭০,০০০ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আজ মাথার পরীক্ষা করাতে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ করতে হয়েছে পরিবারটিকে। এতকিছুর পরও সোনাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো সহানুভূতি দেখায়নি। বরং হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. সুরেন্দ্র সিংহ অভিযুক্ত নার্সদের আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ঘটনার ন্যায়বিচারের জন্য সুস্মিতার স্বামী সঞ্জিত দাশ স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সংগঠন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সঞ্জিত জানিয়েছেন, তিনি আইনের সাহায্য নেবেন এবং এই ঘটনার সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
পরিবারটি বর্তমানে গভীর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। তারা সমাজ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে। এই দুঃখজনক পরিস্থিতি আমাদের সবাইকে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।
এই ঘটনার মাধ্যমে সোনাই হাসপাতালের ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং দায়িত্বের অবহেলার যথাযথ নিরপেক্ষ তদন্তক্রমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে সরব হয়েছেন সচেতন মহল। । প্রশাসন যদি এখনো ব্যবস্থা না নেয়, তবে ভবিষ্যতে আরও অনেক সুস্মিতা ও তার শিশুদের এরকম দুর্ভোগ পোহাতে হতে হয়।