অলপ পিছত করেই ছয় মাস! শিলচর সেটেলমেন্ট অফিসে চরম অবহেলার অভিযোগ, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন উত্তর কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা

ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালে, যখন আফজল হোসেন তার পূর্বপুরুষদের ক্রয়কৃত ২৪ কাঠা জমির মিউটেশনের জন্য আবেদন করেন। কাগজপত্র জমা দেন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই। কিন্তু তখনই জানতে পারেন, তার জমির উপর ইতিমধ্যেই ভুয়া নামে নামজারি করা হয়েছে! সেই অনুযায়ী তিনি অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে মিউটেশনের আবেদন করেন। আবেদনের ডকেট নম্বর ছিল ১২।

এরপর ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি পাটোয়ারীর রিপোর্ট অফিসে জমা পড়ে। কিন্তু তারপর থেকে অফিসার অরুণ জ্যোতি দাস শুরু করেন তার শুরু হয় অবহেলা ও ধোঁকাবাজির নাটক অলপ পিছত, অলপ পিছত। এভাবে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, শেষমেশ ছয় মাস কেটে গেলেও হাতে আসেনি কাঙ্ক্ষিত সার্টিফিকেট। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এই ধরণের বিভাগীয় গাফিলতি সাধারণ নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আফজলের ভাষ্য অনুযায়ী, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার অরুণ জ্যোতি দাস প্রতিবার তাঁকে বলে গেছেন, অলপ পিছত আহিব, অলপ পিছত কইম। এই কথার আড়ালে কেটে গেল ছয়টি মাস, কোনও ফলো-আপ নেই, নেই মিউটেশন সার্টিফিকেট।

এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সাংবাদিকদের ডেকে অফিসারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর আশঙ্কা, ভূমি মাফিয়াদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই ইচ্ছাকৃতভাবে আবেদন ফাইল চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হয়তো ভূমি মাফিয়াদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই আমার মিউটেশন আটকে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে জমির মালিকানা প্রমাণপত্রসহ আমি আবেদন করেছি, সেখানে অফিসার কোনো কারণ না দেখিয়ে ফাইল ঠান্ডা করে রেখেছেন।

দিনের পর দিন বলে আসছেন অলপ পিছত, অথচ আদৌ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এটা কি সোজাসুজি দুর্নীতি নয়? এটাই প্রথম নয়। পূর্বেও শিলচর সেটেলমেন্ট অফিসে একাধিক অভিযোগ উঠেছে ঘুষ, দেরি ও গোপন চুক্তির। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়েও তিনটি ভিন্ন মামলায় তদন্তে উঠে আসে, কিছু নির্দিষ্ট কর্মকর্তা জমি নামজারি নিয়ে দালালচক্রের সঙ্গে বোঝাপড়া করে কাজ করেন। তদন্তের সুপারিশ ছিল, অফিসের মধ্যে স্বচ্ছতা বাড়ানো, অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা জোরদার করা ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের রদবদল। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, অফিস এখনও একই কায়দায় চলে।

এই বিষয়ে স্থানীয় এক বিধায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি কারো জমির ন্যায্য মিউটেশন ছয় মাসেও না হয়, তবে এটা নিঃসন্দেহে গুরুতর ব্যর্থতা। আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব এবং তদন্তের দাবিতে প্রয়োজনে বিধানসভাতেও বিষয়টি তুলব। তিনি আরও বলেন, সেটেলমেন্ট অফিস হল জনগণের আস্থা অর্জনের স্থান, কিন্তু এখন সেটাই দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। শুধু আফজল হোসেন নন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন জানান,

মিউটেশন করতে গেলে নির্ধারিত ফি ছাড়াও ‘চা-পানি’ লাগে, না হলে ফাইল হারিয়ে যায় বা অলপ পিছত হতে হতে মাস পেরিয়ে যায়। এক প্রবীণ কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অফিসে কেউ কাজ করাতে গেলে আগে একজন দালাল খুঁজতে হয়, তারপর অফিসার কাজ করেন। জনগণের এই আফিস এখন পেশাদার ঘুষের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আফজল হোসেন সংবাদমাধ্যমে কাতর আবেদন জানিয়ে বলেন, এই ধরণের অবহেলা শুধু আমার সঙ্গে নয়, আরও অনেকের সঙ্গেই হচ্ছে। আমি চাই, আমার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।

অফিসারের বিরুদ্ধে যদি প্রমাণ মেলে, তাহলে শাস্তির ব্যবস্থা হোক। ক্ষোভ প্রকাশ করে, আফজল হোসেন প্রশাসনের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছেন, অবিলম্বে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। সেটেলমেন্ট অফিসে কে বা কারা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হোক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, আমি চাই না আর কেউ এই অফিসে এসে এমন লাঞ্ছনার শিকার হোক। সাধারণ মানুষ বিচার চায়, ভিক্ষা নয়। অফিসারদের যদি কাজ করার সদিচ্ছা না থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ হওয়া উচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও এ বিষয়ে আফজল হোসেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই বলেন, সেটেলমেন্ট অফিসের পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরেই জটিল, ঘুষ ছাড়া ন্যায্য কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন করে মিউটেশন করতে গেলে অফিসারদের ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে টাকা চাওয়ার নামই অলপ পিছত।

তিনি বলেন, এই অফিস জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে কারোর ব্যক্তিগত ব্যবসা কেন্দ্র হতে পারে না। আমি মুখ্যমন্ত্রী, ভূমি রাজস্বমন্ত্রী ও জেলা শাসকের হস্তক্ষেপ চাই। শুধু আফজল নয়, প্রশ্ন উঠছে, সেটেলমেন্ট অফিসে কাদের হাত শক্ত? ভূমি দুর্নীতিতে কাদের ছত্রছায়া চলছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই এখন প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপের দাবি উঠছে। 

Related Posts

আদালতের নির্দেশ ছাড়াই দোকান ভাঙার নোটিশ, শিলচর পৌর নিগমের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ২৬ জুলাইঃ শিলচর শহরের বুকে আবারও প্রশ্নের মুখে মানবিকতা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা। বিকলাঙ্গ এক দোকানদারের মাথার উপর থেকে যেন রাতারাতি ছিনিয়ে নেওয়া হল ছাদ, পুড়িয়ে দেওয়া হল পঁচিশ বছরের…

লঙ্গাই প্ল্যান্টের পাশে ৮৬ কোটি টাকার নতুন জল প্রকল্পের কাজের শুভারম্ভ, ২৭ জুলাই মন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বরুয়ার হাতে ভূমিপূজন

হর্ষিত দত্ত বরাকবাণী প্রতিনিধি  শ্রীভূমি ২৬ জুলাই: শহর শ্রীভূমির  পানীয়জলের সমস্যা দূর করতে এবার নতুন জল প্রকল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বর্তমান লঙ্গাই প্ল্যান্টের পাশেই…