
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ১৯ মে: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অসমে কংগ্রেস দলের মুখ থাকছেন ভূপেন বরা— এই সিদ্ধান্তে কার্যত সিলমোহর দিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির ইন্দিরা ভবনের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত জানান। দীর্ঘদিন ধরেই এপিসিসি সভাপতি পদে পরিবর্তন নিয়ে নানা মহলে চর্চা, গুঞ্জন, এমনকি গোপন তৎপরতা চলছিল।
একাধিক মহল থেকে বর্তমান সভাপতি ভূপেন বরাকে সরিয়ে দেওয়ার চাপ তৈরি হচ্ছিল। সম্ভাব্য নতুন সভাপতির নাম নিয়েও কংগ্রেস অন্দরে চলছিল বিতর্ক। কিন্তু বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এই জল্পনার ইতি টেনে নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, ভূপেন বরা-ই থাকবেন সভাপতি। কংগ্রেস এই লড়াইয়ে যাচ্ছেন তার নেতৃত্বেই। একজন সচিব পর্যায়ের নেতা ‘বরাকবাণী’কে জানিয়েছেন, ভূপেন বরার নেতৃত্ব নিয়ে আর কোনও দ্বিধা নেই। এখন থেকে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ২০২৬-এ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকারকে উৎখাত করা। নেতৃত্ব বদল নিয়ে আলোচনা বন্ধ হওয়া উচিত।
তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী, সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ, সাংগঠনিক সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। উপস্থিত ছিলেন অসম কংগ্রেসের সকল সাংসদ, বিধায়ক, প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও শরিক দলের প্রতিনিধিরাও। বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, একজোট না হলে অসমে কংগ্রেসের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, যদি একতাবদ্ধ না হতে পারেন, তবে সরকার গঠন সম্ভব নয়। ২০২৬ আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক সুযোগ। শুধু তাই নয়, ব্যর্থতার দায় কোনো একক নেতৃত্বের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া চলবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন নেতৃত্ব। সকলকে দলীয় স্বার্থে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা।
অসম কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বরাক উপত্যকার রাজনৈতিক আবহ আরও উত্তপ্ত। করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস কার্যত অস্তিত্বহীন বলেই অভিযোগ উঠছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল বাদ দিলে প্রায় সর্বত্র কংগ্রেস শূন্য। এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস সভাপতি রজত চক্রবর্তীকে। তৃণমূল স্তরের একাধিক কর্মী অভিযোগ করেছেন, দলের ভেতরেই চলছে স্বজনপোষণ আর টাকার খেলা।
ভোট আমরা দেব, আর টিকিট বিক্রি হবে টাকার বিনিময়ে এটা মানা যায় না। যুব কংগ্রেসের একাংশ রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি বিধানসভা নির্বাচনের আগে রজত চক্রবর্তীর কোম্পানিকে সরানো না হয়, তাহলে করিমগঞ্জে কংগ্রেস আরও তলানিতে ঠেকবে। তাঁরা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে শীঘ্রই প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরীর মাধ্যমে আলোচনায় বসা হবে।
বৈঠকে বিজেপি-বিরোধী সকল দলের সঙ্গে দরজা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অসমে এক শক্তিশালী বিরোধী জোট গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করবে প্রদেশ কংগ্রেস, যা হাইকমান্ডের বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া, বিজেপি সরকারের দুর্নীতি ও জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে জনজাগরণ তৈরি করতে শীঘ্রই আসাম সফরে আসছেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
দলীয় সূত্রে খবর, জনসংযোগে গিয়ে তাঁরা তুলে ধরবেন বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা এবং কংগ্রেসের বিকল্প রূপরেখা। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া, লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈ, এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিং, মহিলা কংগ্রেসের মীরা বরঠাকুর, সাংসদ প্রদ্যুত বরদলই, রকিবুল হুসেন, প্রাক্তন সাংসদ আহমেদ খলফিজ আহমেদ, আবদুল হাফিজ আহমেদ, বিধায়ক শিবমণি বোরা, নন্দিতা দাস, জাকির হুসেন শিকদার, ওয়াজেদ আলী চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক রাজলিনা তিরকি, যুব কংগ্রেস সভাপতি জুবের এনাম এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।
প্রত্যেকেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সরাসরি মত বিনিময় করেন। অসম কংগ্রেস এক কঠিন সময় পার করছে। নেতৃত্ব সংকট, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মাটি হারানোর আতঙ্কে জর্জরিত দল এখন নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। ভূপেন বরাকে সামনে রেখে হাইকমান্ড যে বার্তা দিল, তা একদিকে স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, অন্যদিকে দলীয় ঐক্য এবং বৃহত্তর বিরোধী জোট গঠনের আভাস। ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বৈঠক কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের দিকরেখা নির্ধারণ করে দিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।