
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ১৪ মে: ১৯৬১ সালের ১৯শে মে বরাক উপত্যকার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাংলা ভাষাকে সরকারি মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আত্মবলিদান দেওয়া ১১ শহিদের স্মৃতিতে প্রতি বছরই পালিত হয় ‘ভাষা শহিদ দিবস’। সেই স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের ৬৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ বছর আরও বৃহৎ পরিসরে তিনদিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চলেছে ভাষা শহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতি, শিলচর।
মঙ্গলবার শিলচর স্টেশন চত্বরে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন উদ্যোক্তারা। ডঃ রাজীব কর, বাবুল হোড়, নিখিল দাস সহ সমিতির অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, বরাক উপত্যকা, গুয়াহাটি ও পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ও চিন্তাবিদগণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
১৯৬১ সালের ১৯ মে, ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শিলচর রেল স্টেশনে এক বিশাল প্রতিবাদ সভা চলাকালে পুলিশ গুলিতে শহিদ হন এক মহিলাসহ ১১ জন। বাংলা ভাষার মর্যাদার দাবিতে এই আত্মত্যাগ আজও বরাকবাসীর অহংকার। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালেও একই দাবিতে আরও ৪ জন শহিদ হন। এই আত্মবলিদানকে স্মরণ করে প্রতি বছরই পালিত হয় ভাষা শহিদ দিবস।
তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি ১৬ মে ‘অমর ঊনিশের মহামিছিল’—শিলচর শহরের জনগণ ভাষা শহিদদের স্মরণে এই দিন রাজপথে পা মেলাবেন। শহরজুড়ে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা আয়োজকদের। ১৭ মে হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় ঊনিশ’—এই দিনটির অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যচর্চা এবং ভাষা আন্দোলনের চেতনা নিয়ে। থাকবে কবিতা পাঠ, বক্তৃতা ও আলোচনা।
১৮ মে দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে সৃজনশীলতাকে। দেয়াল ও পথ আলপনা সংগীত, কবিতা ও নৃত্য প্রতিযোগিতা বিকেলে তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বরাক উপত্যকার তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ‘ঊনিশের পদক’ প্রদান করা হবে। ১৯ মে—মূল দিবস সকালেই শহিদ বেদিতে মাল্যদান ‘বর্ণমালা রোদ্দুর’ নামের একটি বিশেষ শৈল্পিক প্রকল্পের উন্মোচন, রক্তদান শিবির, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে গান্ধীবাগ শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন, সন্ধ্যায় ঊনিশের এগারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এরপর শিলচর স্টেশন চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা, যেখানে উপস্থিত থাকবেন বরাক, গুয়াহাটি ও পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অতিথিবৃন্দ।
আয়োজকরা জানান, ঊনিশ আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। এই কর্মসূচিকে সফল ও সার্থক করতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তাঁরা সকলকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এই ঐতিহাসিক দিনটি শুধু বরাক উপত্যকার নয়, সমগ্র বঙ্গজনতার আত্মমর্যাদার লড়াইয়ের নিদর্শন। শহিদের রক্তে লেখা সেই ইতিহাসকে স্মরণ করে আবারও জেগে উঠবে শিলচর—ঊনিশের চেতনায়।