
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভুমি ৫ মেঃ পঞ্চায়েত নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অশান্তির খবর ততই প্রকাশ্যে আসছে। এবার দুর্নীতির তীব্র অভিযোগে কাঁপছে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস। ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে, শ্রীভূমি করিমগঞ্জ কংগ্রেসের একাংশ টাকার বিনিময়ে জিলা পরিষদের টিকিট দিচ্ছেন।
ঘটনাস্থল শ্রীমন্ত কানিশাইল বাশাইল। অভিযোগ, বিজেপির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মুস্তাককে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে টিকিট পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করে যাওয়া কংগ্রেস নেতা সেলিম উদ্দিন টিকিট পাননি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে মাটিতে বসে পড়েছেন তিনি। জানা গেছে, সেলিম উদ্দিন এক প্রবীণ কংগ্রেসি নেতার ছেলে ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
এই ভিডিও ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় জনমনে। এলাকাবাসীরা ঘটনাস্থলে ভিড় জমান। অনেকেই চিৎকার করে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেন, কেউবা ভিডিও তুলে রাখেন নিজের মোবাইলে। করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ টিকিট বণ্টনের কালো চিত্র এক লহমায় সামনে চলে আসে।
এ প্রসঙ্গে আসাম কংগ্রেসের তত্ত্বাবধায়ক জিতেন্দ্র সিংহের কাছে বিষয়টি ভিডিও সহ পাঠানো হলে তিনি চটে যান। ক্ষোভপ্রকাশ করে তিনি জানান, যারা টিকিটের বিনিময়ে টাকা নিয়েছেন, তাদের দলে থাকার কোনও অধিকার নেই। কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন, দোষীদের শীঘ্রই বহিষ্কার করা হবে।
অন্যদিকে, টিকিট বঞ্চিত হয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন এক প্রার্থী, পরে দলের বদরপুর চৈতন্যনগর ব্লকের সভাপতি জাকারিয়া আহমেদ পান্নার সহানুভূতিশীল ব্যবহারে তিনি প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপিকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে অনুপযুক্ত প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে টিকিট দিয়েছে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবার প্রকাশ্যে দল ছাড়লেন করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুক উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে প্রায় ২০০ জন কংগ্রেস কর্মী দল ত্যাগ করেন। রাজাটিলা-উমরপুর জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসাবে নির্দল হয়ে নির্বাচনে লড়েছেন আশুক।
বরাকবাণীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কংগ্রেস এখন টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রি করেছে। এই নেতৃত্বকে যদি দ্রুত বহিষ্কার না করা হয়, ভবিষ্যতে রাজীব ভবনই বিজেপির ঘাঁটি হয়ে উঠবে। তাঁর দাবি, আমি জয়ী হবো এবং জয়ী হয়ে দুর্নীতিমুক্ত করার সংকল্পে আবার কংগ্রেসে ফিরবো।
এই ঘটনায় করিমগঞ্জ কংগ্রেস কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে দলীয় নিষ্ঠাবান কর্মীরা বঞ্চনার শিকার, অন্যদিকে নেতাদের বিরুদ্ধে টিকিট বিক্রির গুরুতর অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস এখন চাপে। জিতেন্দ্র সিং-এর কড়া অবস্থান এবং কর্মীদের গণছাড়ার পর এই দুর্নীতি কাণ্ডে কী ব্যবস্থা নেয় প্রদেশ কংগ্রেস, তা সময়ই বলবে।