শিলচরে ব্রহ্মা কুমারী সেন্টারে ধর্মের নামে কোটি টাকার প্রতারণা, জেউতি কলিতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠল জনতা

তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ৮৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কণিকা শর্মা। অভিযোগ অনুযায়ী, জেউতি কলিতা তাঁর কোটি টাকার সম্পত্তি প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছেন। কণিকা শর্মা জানান, শেষ জীবনের শান্তি ও আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার আশায় তিনি নিজের বাসভবনের উপরের তলা উইলের মাধ্যমে ব্রহ্মা কুমারীর নামে লিখে দেন, শর্ত ছিল যে সংস্থাটি তাঁর যত্ন-আত্তির দায়িত্ব নেবে।

কিন্তু বাস্তবে ঘটে এর উল্টো। ২০২২ সালের বিধ্বংসী বন্যায় তাঁর নিচতলার ঘর সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংস্থার তরফ থেকে কোনো সহায়তা পাননি তিনি। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয় আত্মীয়ের বাড়িতে। অন্যদিকে, তাঁরই বাড়ির দোতলায় বিলাসবহুল এসি রুমে বসবাস করতে থাকেন জেউতি কলিতা।

আজকের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ব্রহ্মা কুমারী সেন্টারে নতুন ও পুরাতন সদস্যদের মধ্যে রিপন নাথ, রামানুজন ভট্টাচার্য, মুন্না দেবনাথ, সূর্য শীল সহ আরো সদস্যরা গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, এই প্রথম নয়, অতীতেও একাধিক নিঃসন্তান প্রবীণ মহিলা ও পুরুষের কাছ থেকে একই কায়দায় সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জ্যোতি কলিতার বিরুদ্ধে।

একাধিক অভিযোগকারী জানান, সেন্টারের আধ্যাত্মিক চেহারার আড়ালে পরিচালিত হয় একটি সুপরিকল্পিত প্রতারণা চক্র। এক পুরাতন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ভাবতাম এটি ঈশ্বরের কাজ, কিন্তু ভিতরে ছিল সম্পত্তির প্রতি লোভ, মানসিক চাপে উইল করানো ও সুবিধাভোগী আচরণ। ব্রহ্ম কুমারীর শান্তির মুখোশ আজ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে শিলচরের সাধারণ মানুষ।

আধ্যাত্মিকতার নামে প্রতারণা, বিশ্বাসের নামে লুটপাট, আর ‘ভগবানের বাণী’র মুখোশ পরে কোটি কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠল এই সংস্থার শিলচর শাখার প্রধান জেউতি কলিতার বিরুদ্ধে। আজকের দিনে শিলচরের বুকে যেন ফুটে উঠল সত্যের দাবিতে এক গণঅভ্যুত্থান। বাঙালি নবনির্মাণ সেনার নেতৃত্বে শত শত সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, বৃদ্ধা কণিকা শর্মার সমর্থক, এবং এমনকি প্রজাপিতা ব্রহ্মা কুমারীর নতুন ও পুরাতন সদস্যরাও মুখ খুললেন এই সংগঠনের অন্দরমহলের লোমহর্ষক দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে।

৮৫ বছরের নিঃসন্তান বৃদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কণিকা শর্মা একসময় বিশ্বাস করেছিলেন আধ্যাত্মিকতায়। বিশ্বাস করেছিলেন এই সংস্থার শান্তি ও নির্লোভতার আদর্শে। তাই নিজের শেষ জীবনের সঞ্চয়—কোটি টাকার সম্পত্তি, স্বপ্নের বাড়ি, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা—সমর্পণ করেছিলেন ব্রহ্ম কুমারী সংস্থার নামে উইল করে। উইলে ছিল স্পষ্ট উল্লেখ, কণিকা শর্মার দেখাশোনা ও যত্নের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে সংস্থা।

বাস্তবে কী ঘটল? বিধ্বংসী বন্যায় তাঁর নিচতলার বাসস্থান ধ্বংস হলেও, ব্রহ্ম কুমারীর পক্ষ থেকে আসেনি এক কাপ গরম জল পর্যন্ত। অথচ সেই সংকটের সময় তাঁর বাড়ির দোতলায় এসি ঘরে রাজকীয় জীবন কাটাচ্ছেন জেউতি কলিতা, যিনি কিনা আজকের এই কেলেঙ্কারির প্রধান অভিযুক্তা। ব্রহ্ম কুমারী সেন্টারের শিলচর শাখার প্রধান হিসেবে জেউতি কলিতার ভাবমূর্তি এতদিন ছিল নির্লোভ, আধ্যাত্মিক, ও স্বনিয়ন্ত্রিত এক “সেবিকা”র। কিন্তু আজকের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সেই মুখোশ খসে পড়ে গেল জনসমক্ষে।

জেউতি বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, একাধিক বৃদ্ধ, নিঃসন্তান মহিলার সম্পত্তি কৌশলে আত্মসাৎ করা, সদস্যদের মানসিক চাপে রেখে উইল আদায় করা, আধ্যাত্মিকতার নামে সংস্থাকে ব্যক্তিগত বিলাসিতার আখড়ায় পরিণত করা। এমনকি, অভিযোগ উঠেছে যে, তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললেই পাপী,অ পবিত্র আত্মা, আখ্যা দিয়ে সংস্থা থেকে বের করে দেওয়া হয়—যেন এক ভয়ের শাসন কায়েম করেছেন তিনি।

আজকের প্রতিবাদী ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শহরের বিশিষ্ট সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, এমনকি ব্রহ্ম কুমারীর নতুন পুরাতন সদস্যরাও। তাঁরা একে একে মঞ্চে উঠে জনসমক্ষে তুলে ধরেন এই সংস্থার দীর্ঘদিনের ভণ্ডামি, আর্থিক দুর্নীতি ও কণিকা শর্মার সঙ্গে হওয়া নির্মম আচরণ। বাঙালি নবনির্মাণ সেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রীতম দেব জানান, আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু ধর্মের নামে প্রতারণার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে। কণিকা শর্মার মতো আরও কতজন নীরবে নিঃস্ব হয়ে গেছেন, তা এখন খতিয়ে দেখা হবে।

সাধারণ বিশ্বাসীদের অনেকেই বলছেন, যাঁরা একসময় ব্রহ্মা কুমারীর ‘আধ্যাত্মিকতা’য় আস্থা রেখেছিলেন, আজ তাঁরা মনে করছেন প্রতারিত হয়েছেন। আজকের প্রতিবাদ কর্মসূচি সেই দীর্ঘদিনের নিঃশব্দ যন্ত্রণা ও ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। প্রতিবাদীরা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন: খুব শীঘ্রই এই সেন্টারের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে কণিকা শর্মাকে, সরিয়ে দিতে হবে জেউতি কলিতাকে।

অন্যথায়, শিলচরের এই বিতর্কিত সেন্টার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন শিলচর জুড়ে আলোচনা চলছে—ধর্ম কি তবে শুধুই মুখোশ? শান্তির বানী কি ব্যবসার বিজ্ঞাপন হয়ে উঠেছে?  ঘটনার সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জেউতি কলিতা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দেয়। এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে যে জেউতি কলিকাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সম্পূর্ণ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানান।

Related Posts

মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…