
বিপ্র নাথ বরাকবাণী প্রতিনিধি নিলাম বাজার, ১৫ এপ্রিলঃ দক্ষিণ করিমগঞ্জের বর্তমান বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ এক গম্ভীর অবস্থান গ্রহণ করেছেন আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। রাজনীতির ময়দানে বহু চড়াই-উতরাই পার করা এই অভিজ্ঞ নেতা এবার জনসাধারণকে সচেতন করতে মাঠে নেমেছেন, মূলত দুর্নীতিগ্রস্ত, দালালচক্রের সাথে যুক্ত প্রার্থীদের ভোট না দেওয়ার জন্য।
সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ কালিগঞ্জ জেলা পরিষদ সমষ্টির বর্তমান অ.গ.প প্রার্থী ও সাবেক নিলামবাজার গাঁও পঞ্চায়েত সভাপতি আবু তালহা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ আনেন। তিনি আবু তালহাকে ‘দুর্নীতিবাজ’ থানার দালাল এবং ‘বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত একজন ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন। বিধায়ক জানান, এ ধরনের লোক যদি নির্বাচিত হন, তবে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হবে এবং পঞ্চায়েত স্তরে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তিনি জনগণকে আহ্বান জানান,এমন প্রার্থীদের ভোট না দিয়ে সেই সব নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করুন, যারা সত্যিই মানুষের জন্য কাজ করতে চান, যাঁদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন।
এই সম্মেলনে বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ তার পাশে বসিয়ে ছিলেন নির্দল প্রার্থী নাসির উদ্দিনকে। তাঁর মতে, নাসির উদ্দিনের মতো সৎ, শিক্ষিত ও জনসেবায় আগ্রহী মানুষ যদি নির্বাচিত হন, তাহলে পঞ্চায়েত স্তরের উন্নয়ন আরও বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, আজকের দিনে যারা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে দলীয় ছত্রছায়ায় লুকিয়ে থেকে অপকর্ম চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি। ভোটারদের উচিত নিজ বিবেক দিয়ে ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য করা।

এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে বিধায়ক অভিযোগ করেন, নিলামবাজার এলাকার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘লাভ জিহাদ’ নামক একটি ঘটনায় কালিগঞ্জের অ.গ.প প্রার্থী আবু তালহা চৌধুরী এবং নিলামবাজারের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ রায়ের নাম জড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—এই ইস্যুতে মধ্যস্থতার নামে তারা পাঁচ থেকে দশ লক্ষ টাকা দালালি করে আত্মসাৎ করেছেন। পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে তারা বাধ্য হন টাকা ফেরত দিতে। এই ঘটনা তুলে ধরে বিধায়ক বলেন, যে নেতারা সাধারণ মানুষের দুর্দশা নিয়ে ব্যবসা করে, তারা কখনোই জনসেবার উপযুক্ত হতে পারে না।
এক সময়ের কংগ্রেসের শক্তিশালী নেতা সিদ্দেক আহমেদ বর্তমানে অসম গণপরিষদের প্রতি ঝুঁকছেন বলেই নানা মহলে আলোচনা চলছে। যদিও তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অ.গ.প-তে যোগ দেননি, তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এই দলেই যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই অবস্থান বদলের পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে কেউ কেউ মনে করছেন, দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে এখন তিনি ব্যক্তি নির্ভর রাজনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই অবস্থানই তাঁকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব প্রার্থীদের পক্ষে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
সিদ্দেক আহমেদ তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, আজে বাজে প্রার্থী নির্বাচন করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনারা, সাধারণ মানুষ। তাই যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও জনসেবায় বিশ্বাস রাখেন, তাঁদেরকেই নির্বাচিত করুন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন নির্দল প্রার্থী নাসির উদ্দিন (কালিগঞ্জ)এবং শংকর মালাকার (নিলামবাজার) এদের মতো প্রার্থীদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করলে সত্যিকারের পঞ্চায়েত উন্নয়ন সম্ভব।
দক্ষিণ করিমগঞ্জে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন দলীয় রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে ব্যক্তি নির্ভরতায় রূপ নিচ্ছে। যেখানে জনগণের প্রত্যাশা সৎ, সাহসী ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব। এই পরিবর্তনের পথে এগিয়ে চলেছেন বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ। তাঁর কণ্ঠে উঠে আসছে একটাই বার্তা-দালাল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে বেছে নিন।