পরিতোষ পাল বরাকবাণী প্রতিনিধি ধর্মনগর ১২ এপ্রিল: ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবীতে শনিবার দুপুরে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুস্টিত হয়েছে। মিছিল চলাকালীন মিছিলকারীদের মধ্যে থাকা একাংশ উশৃংখল যুবক পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে। এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল এবং কাঁচের বোতল নিক্ষেপ করায় এসডিপিও সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। ঘটনা কৈলাসহরের কুবঝার এলাকায়। এই ঘটনায় গোটা কৈলাসহর মহকুমায় তীব্র আতংক বিরাজ করছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বারো এপ্রিল শনিবার কৈলাসহর যৌথ আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে ওয়াকফ সংশোধন বিল প্রত্যাহারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল অনুস্টিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি টিলাবাজার থেকে শুরু হয়ে কুবঝার এলাকায় আসার পর মিছিল কারীরা পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ঘটনাস্থলে কৈলাসহরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, কৈলাসহর থানার ওসি সুকান্ত সেন চৌধুরী, ইরানি থানার ওসি অরুনদয় দাস, ডি.এস.পি উৎপলেন্দু দেবনাথ সহ আরও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিক সহ টি.এস.আর এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীরাও ছিলো। পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে মিছিল কারীদের মধ্যে কতিপয় উশৃংখল যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল এবং কাঁচের বোতল দিয়ে ঢিল মারতে শুরু করে। সেই ঢিলের আঘাতে কৈলাসহর মহকুমার পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, ডি.এস.পি উৎপলেন্দু দেবনাথ, সিনিয়র পুলিশ ইন্সপেক্টর যতীন্দ্র দাস সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী ও সি.আর.পি.এফ জওয়ানরা গুরুতর জখম হন। এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে টি.আর গ্যাস এবং শেল ফাটায়। এরপরও পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় পুলিশ মৃদু লাটি চার্জ করলে মিছিল কারীরা পালিয়ে যায়।
পুলিশের লাটি চার্জে অনেকজন মিছিল কারী আহত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে গুরুতর জখম পুলিশ কর্মীদের এবং আহত মিছিল কারীরাও চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার সুধামবিকা আর, নর্দান ডি.আই.জি রতি রঞ্জন দেবনাথ ঘটনাস্থলে এসে সার্বিক খোঁজ খবর নেন। ঘটনা পর ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার সুধামবিকা আরের সাথে মিছিলের নেতৃত্বকারী মো: বদরুজ্জামানের কথা কাটাকাটি হয়েছে। পুলিশ সুপার বদরুজ্জামানকে ধমকির সুরে সর্তক করতেই বদরুজ্জামান পুলিশ সুপারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন যে, ধমকি দিয়ে কথা বলবেন না। আস্তে এবং ভদ্র ভাবে কথা বলুন। এরপর পুলিশ সুপার সুধামবিকা আর নম্র হয়ে যান।
ঘটনার পর নর্দান ডি.আই.জি রতি রঞ্জন দেবনাথ জানান যে, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং কুবঝার এলাকা সহ শহর উত্তরাঞ্চল এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনী মজুত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মিছিলের নেতৃত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, মো: বদরুজ্জামান, ইউনুস মিঞা খাদিম, সইফুল ইসলাম, লিটন জামান, সিরাজুল ইসলাম সহ আরও অনেকে। মিছিলের নেতৃত্বকারীদের মধ্যে অন্যতম মো: বদরুজ্জামান ঘটনাস্থলে জানান যে, এই মিছিল কিংবা প্রতিবাদ সনাতন হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ, শিখ, খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে নয়। আমরা সনাতনকে সন্মান করি এবং শ্রদ্ধা করি। আমাদের আন্দোলন ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে।
তাই, সব ধর্মের মানুষেরা আমাদের আন্দোলনকে সাহায্য সহযোগিতা করার আহবান জানান। তাছাড়াও উনি বলেন যে, মিছিলকারীর পক্ষ থেকে কেউ পুলিশের উপর ঢিল ছোঁড়ে নি। কুবঝার এলাকায় মিছিল আসতেই রাস্তার পাশ্ববর্তী এলাকার বাড়ির ভিতর থেকে কে বা কাহার পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রথমে জুতো দিয়ে ঢিল ছোড়ে। পরবর্তী সময়ে ইট দিয়েও ঢিল দিয়েছে। কে বা কাহারা এই কাজ করেছে তা এখনও সনাক্ত করা যায় নি।
এহেন অবস্থায় ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার সুধামবিকা আর না বুঝে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবার জন্য আমাকে দায়ী করেন। বদরুজ্জামান পুলিশ সুপারের এই ভুমিকায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাছাড়া, পুলিশ টি.আর গ্যাস ও শেল ফাটানোর পর লাটি চার্জ করায় প্রচুর মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার জন্য একাংশ পুলিশ দায়ী বলেও জানান। শনিবার সন্ধ্যায় ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার সুধামবিকা আর সংবাদ প্রতিনিধিদের জানান যে, এই ঘটনায় মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং একজন ডি.এস.পি, একজন সিনিয়র ইন্সপেক্টর সহ পুলিশ কনস্টেবল এবং সি.আর.পি.এফ জওয়ান সহ প্রায় পনেরো জন জখম হয়েছেন। এই পনেরো জনের মধ্যে অনেকেই আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনায় পুলিশ একটি সমুঠু মামলা নিয়েছে কৈলাসহর থানায়। এবং আটজন যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে কৈলাসহর আদালতে প্রেরণ করেছে। নিউজ পাঠানো অব্দি আদালতের রায় জানা যায় নি। অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যায় মো: বদরুজ্জামান সংবাদ প্রতিনিধিদের জানান যে, পুলিশের লাটি চার্জের ফলে পঞ্চাশ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এরমধ্যে জাহাঙ্গীর মিঞা নামের এক ব্যক্তি গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে।
