
ড. নিখিল দাশ শিলচর ১২ এপ্রিল: ত্রিপুরা ও বরাক উপত্যকায় অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে প্রতারণা এখন নতুন নয়। তবে এবারে যিনি সামনে এসেছেন, তিনি নিঃসন্দেহে প্রতারণার মাস্টারমাইন্ড নাম পার্থ দেবনাথ। রাজ্যে পুলিশ অনলাইন ট্রেডিং প্রতারণার বিরুদ্ধে সক্রিয় হলেও ত্রিপুরার এক কুখ্যাত ট্রেডিং প্রতারক পার্থ দেবনাথের ছলচাতুরি এখনও থামেনি। ৫১ দিনে দ্বিগুণ মুনাফা”র লোভ দেখিয়ে তিনি বরাক উপত্যকার তিন জেলা—কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি—থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ। পার্থ দেবনাথ নামের এই প্রতারক প্রথমে নিজেকে সফল ট্রেডার বলে পরিচয় দেন। নিজের তৈরি ভুয়ো ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ও জাল নথি ব্যবহার করে শত শত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। আশ্বাস দেন, মাত্র ৫১ দিনের মধ্যে তাদের টাকা দ্বিগুণ হয়ে ফেরত আসবে।
প্রতারক পার্থ দেবনাথ বিনিয়োগকারীদের মন জিততে এবং শান্ত রাখতে ১০০টিরও বেশি পোস্ট-ডেটেড চেক ইস্যু করেন, যাতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়ে ছিল। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে, যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি ওইসব চেক দিয়েছেন, তাতে নেই কোনও পর্যাপ্ত ব্যালেন্স! ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, পার্থ হাইলাকান্দিতে এসে বিনিয়োগকারীদের সামনে একপ্রকার স্বীকার করেন যে তাঁদের সমস্ত টাকা সে রেখেছে এবং এক বছরের মধ্যে তা ফেরত দেবে। তবে কথা দিয়ে কথা রাখেননি। এরপরই গা ঢাকা দেন। যখনই কেউ তার বাড়িতে টাকা ফেরত চাইতে যান, পার্থর পরিবারের সদস্যরা উল্টে তাঁদের হুমকি দিতে থাকেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিযোগ এসেছে পার্থর শ্বশুর, সুভাষ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। তিনি প্রকাশ্যে বিনিয়োগকারীদের প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগ, তিনি বলেন যদি কেউ মামলা করে, তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে। বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হলেও, এখনও পর্যন্ত পার্থ দেবনাথের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

বরাক উপত্যকা এবং ত্রিপুরাজুড়ে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণা কেলেঙ্কারি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভুয়ো অনলাইন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভনে শত শত মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয় লোপাট করেছে এক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উঠে এসেছে ত্রিপুরার পার্থ প্রতিম দেবনাথের নাম। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ অনুযায়ী, পার্থ প্রতিম দেবনাথ সহ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা—নম্রতা দাস (এমডি), সুভাষ চন্দ্র দাস, শিউলি দাস, পান্না লাল দেবনাথ—মিলিতভাবে একটি ফাঁদ পেতে শিলচর ও হাইলাকান্দির বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছেন। প্রতারণার পর দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ এই চক্র বর্তমানে আগরতলায় আত্মগোপন করে আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সূত্র অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই প্রায় ২০০-৩০০ জনের অধিক মানুষ এই চক্রের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেউ কেউ তাদের শেষ সঞ্চয় খুইয়েছেন, কেউ কেউ হতাশায় প্রাণও হারিয়েছেন।
বিনিয়োগকারীরা জানান, বহুবার ত্রিপুরা পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতারকদের মধ্যে পার্থদেবনাথ ছাড়াও তার পরিবার-পরিজনের প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, দালালদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে বরাক উপত্যকা জুড়ে, যারা স্থানীয় মানুষকে প্রলুব্ধ করে এই প্রতারণার জালে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে বরাক এবং ত্রিপুরার বহু বিশিষ্ট নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা জানান, এই ধরনের বেআইনি অনলাইন ট্রেডিংয়ের ফলে যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যুবকেরা আর্থিক স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। দু’মাসেই লগ্নির টাকা দ্বিগুণ! এমন স্বপ্নের অফার দিয়ে অনলাইন ট্রেডিং সংস্থা ‘Finsurge Trading Pvt. Ltd.’ র মাধ্যমে বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষকে চরমভাবে প্রতারিত করল ত্রিপুরার বাসিন্দা পার্থ দেবনাথ। বরাকবাণীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অন্তত ৩২ কোটি টাকার প্রতারণা চক্রের তথ্য, যেখানে শতাধিক মানুষ তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়েছেন। এই প্রতারণা চক্রটি মূলত হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ানো হত, যেখানে বলা হত ৫১ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ লাভ। বিশ্বাস করে বহু মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা লগ্নি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে বিনিয়োগকারীদের আবেদন—অবিলম্বে এই প্রতারকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং যাতে তিনি আইনের ফাঁক গলে না পালাতে পারেন i