
ড. নিখিল দাশ শিলচর ৩রা এপ্ৰিল: সমগ্র আসামে অনলাইন ট্রেডিং প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের কড়া অভিযান শুরু হওয়ার পর বরাক উপত্যকাতেও শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। শাসক দলের ছত্রছায়ায় থেকে অপকর্ম চালানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়েও শেষরক্ষা হলো না শাকির, রাজদীপ, রশিদ, সুফিয়ান, আবু চৌধুরী বাহিনীর। বরাক উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ পরিবেশন করছিল বরাকবাণী। শেষমেশ, পুলিশের হস্তক্ষেপে গত কয়েক দিনের মধ্যে ধরা পড়েছে এই চক্রের মূল কারিগর শাকির, রাজদীপ, জাবির এবং তাদের বিশ্বস্ত দালাল মুজ্জাক্কির হুসেন মুন্না ও শাকিল আহমেদ।
পুলিশের এই অভিযানে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির বাতাস বয়ে গেলেও এখনও অধরা রয়ে গেছে এই চক্রের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সূত্রের খবর, ধরা পড়া সদস্যদের পাশাপাশি এই চক্রের দালাল ইফজাল, জাকার, আসফাক, মুস্তাফিজুর, তামিম, জাফররা এখনও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। তারা ধরা পড়া সদস্যদের মুক্ত করতে নানান কৌশল আঁটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বদরপুর ও বাখরশালের মধ্যবর্তী একটি অজ্ঞাত হোটেলে এই চক্রের কিছু সদস্য এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বছরের পর বছর এই চক্রের সদস্যরা অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে বরাকের যুবসমাজ আরও বড় সংকটের মুখে পড়তে পারে।
পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, ধৃত অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং তাদের থেকে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই এই চক্রের আর্থিক লেনদেন ও যোগসাজশ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা এখনও পলাতক রয়েছে, তাদের ধরতে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। বরাকবাসীর সহায়তা পেলে দ্রুতই পুরো চক্রটি ধরা পড়বে। এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষ পুলিশের প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করলেও এখনও শাকির-রাজদীপ চক্রের বাকি সদস্যদের কবে আইনের আওতায় আনা হবে? পুলিশ কি সত্যিই পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পারবে, নাকি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশীর্বাদে আবারও মুক্ত হয়ে যাবে এই প্রতারক চক্র?
বর্তমানে বাটইয়া, আছিমগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় ভুয়ো ট্রেডিং কেলেঙ্কারির চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলি জনমানসে আলোড়ন তুলেছে। অভিযোগ উঠছে, এই প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের অর্থ সংগ্রহের প্রধান মাধ্যম হিসাবে আবু তাহার নাম উঠে আসছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, শাকির বাহিনী এই অঞ্চলে বড় অঙ্কের টাকা কালেকশন করে এবং সেই টাকা আবু তাহার মাধ্যমেই পরিচালিত হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত পুলিশের তদন্তে কোনও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি, তবুও সাধারণ মানুষ চায়ের দোকানে বসে কানাঘুষো করছে যে আবু তাহার মাসিক LIC প্রিমিয়ামের পরিমাণ তিন লক্ষ টাকা! এই তথ্য শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা অবাক হচ্ছেন, কারণ এ ধরনের বিশাল অঙ্কের প্রিমিয়াম সাধারণ আয়ের মানুষের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, চুরাইবাড়ি ও ত্রিপুরা থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা সংগ্রহের অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের গুঞ্জন অনুযায়ী, ত্রিপুরার নামকরা এজেন্ট আলী হোসেন প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমানে শিলচরের সোনাই রোডের নাগাটিলা এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। যদিও পুলিশ এখনও তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি, তবে জনগণের মুখে মুখে এই বিষয়ে নানান আলোচনা চলছে। এ ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষকে আরও হতাশ করছে, কারণ পুলিশ যদি সঠিকভাবে তদন্ত চালিয়ে আলী হোসেনের সন্ধান পায়, তবে পুরো কেলেঙ্কারির মূল চক্রকে ধরা সম্ভব হতে পারে। সচেতন মহলের মতে, আবু তাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হয়তো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসবে, এই কেলেঙ্কারির মূল রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে।

ভুয়ো ট্রেডিং কেলেঙ্কারির ঘটনায় একের পর এক তথ্য সামনে আসছে, যা সাধারণ মানুষকে অবাক করে দিচ্ছে। প্রতারণার জাল যে কত গভীর, তা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। গোপন সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা এক বড় প্রতারক, যার পরিচয় এখনও সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে আসেনি। তবে তদন্তে উঠে এসেছে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা সত্যিই বিস্ময়কর। এদিকে, অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে যে, টেট শিক্ষক সুফিয়ান চৌধুরী ও তার ভাই তথা সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ বৈজ্ঞানিক আবু চৌধুরী নাকি বড় পরিকল্পনা করছেন। জানা গেছে, তারা তাদের বটরশির আশেপাশের সমস্ত বেনামী সম্পত্তি বিক্রির চিন্তাভাবনা করছেন। প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ এই সম্পত্তি বিক্রির তোড়জোড় কেন? কোথাও কি বড় কোনো দুর্নীতি জড়িয়ে আছে? নাকি কেলেঙ্কারির টাকা সুরক্ষিত রাখার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে তদন্তকারী পুলিশ বাহিনী তৎপর হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, এই সম্পত্তি বিক্রির পেছনে রয়েছে বিশাল এক ষড়যন্ত্র। সুফিয়ান চৌধুরী ও তার ভাই আবু চৌধুরী তাদের সম্পদ বিক্রি করে অন্য কোথাও বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। তবে এই বিনিয়োগ কি সৎ পথে হবে, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো অদৃশ্য চক্রান্ত? অনেকেই বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বৈজ্ঞানিক পরিচিতি পেলেও, আবু চৌধুরীর কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ রয়েছে। কিছু বিশেষ সূত্রের মতে, তিনি নাকি সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দার আড়ালে এমন কিছু কর্মকাণ্ডে যুক্ত, যা জনসাধারণের চোখে আসেনি। এই কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আসার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষেরও দাবি, এই সম্পত্তি বিক্রির পরিকল্পনার নেপথ্যে যদি কোনো প্রতারণা থেকে থাকে, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এই ঘটনা কতদূর গড়াবে, তদন্ত কোন দিকে মোড় নেবে, আর এই মহাপ্রতারক শেষ পর্যন্ত ধরা পড়বে কিনা—সব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে আপাতত বলা যায়, ভুয়ো ট্রেডিং কেলেঙ্কারির এই ঘটনা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই, আর সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় আছেন সত্যের উদ্ঘাটনের!