
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ৩০মার্চ: রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী ভূ-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা যতই বলুন না কেন, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দিন দিন বেড়েই চলেছে ভূ-মাফিয়াদের দাপট, আর পুলিশ প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকায় হয়েছে। এই বাস্তবতা ফের একবার প্রমাণিত হলো শিলচর শহর সংলগ্ন মাছূঘাট এলাকায়, যেখানে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা দিন দুপুরে প্রকাশ্যে জমি দখলের ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি কিছু ভু-মাফিয়ারা হাতে দা, কোদাল, লাঠি, সোটা নিয়ে একদল দুষ্কৃতী মাছূঘাট এলাকায় চড়াও হয়। তারা এলাকায় প্রবেশ করেই তাণ্ডব শুরু করে এবং নিরীহ জমির মালিকদের হুমকি দিয়ে জায়গা দখল করে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও দুষ্কৃতীদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে পিছু হটেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই পুরো ঘটনাটি প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও পুলিশ কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জমি দখলের সময় পুলিশকে বারবার ফোন করেও কোনো সদুত্তর মেলেনি। এমনকি পুলিশের একাংশের সঙ্গে ভূমিদস্যুদের সখ্যতা থাকার অভিযোগও উঠেছে। এক স্থানীয় বাসিন্দার ভাষ্য অনুযায়ী, “আমরা পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে ঘন্টার পর ঘন্টা দেরি করেছে। তারা আসার পরেও শুধু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলে গেছে, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি পুলিশ প্রশাসন ভূ-মাফিয়াদের মদত দিচ্ছে? নাকি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের ঘটনাগুলিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? যদি তাই হয়, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? রাজ্যের প্রশাসন যদি ভূ-মাফিয়াদের রুখতে ব্যর্থ হয়, তবে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাবে কিভাবে?
শিলচর তথা বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নমেন্ট বয়েজ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ফনি ভূষণ দাসের কন্যা মৌসুমী দাসের ৫ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে একদল দুষ্কৃতী। বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত এই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন মৌসুমী দাস। কিন্তু কিছুদিন আগেই এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিলচর ভূ-বাসন আধিকারিক কার্যালয়ের কিছু দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারী, পাটোয়ারী ও প্রভাবশালী ভূ-মাফিয়াদের যোগসাজশে একদল দুষ্কৃতী ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে ২৪শে মার্চ মৌসুমী দাসের জমি জোরপূর্বক দখল করে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন একটি জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হলেও, এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। শিলচরসহ গোটা বরাক উপত্যকায় বর্তমানে জমি দখলের প্রবণতা এক চরম আকার ধারণ করেছে। ভুয়া নথি বানিয়ে জমি দখলের ঘটনা যেন এক নৈমিত্তিক চিত্র হয়ে উঠেছে। অথচ রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার ঘোষণা করেছেন যে, ভূ-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক উল্টো।
প্রতিদিন নতুন নতুন ভুয়া নথি তৈরি হচ্ছে, বেহাত হচ্ছে সাধারণ মানুষের বহু কষ্টে অর্জিত জমি। পুলিশের ভূমিকা? তারা যেন নির্বাক দর্শক! এই ঘটনার পর মৌসুমী দাস ন্যায়বিচারের আশায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন, কিন্তু এখনো কোনো সুবিচার পাননি। জমি দখলকারী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলও সরব হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ভূ-মাফিয়াদের ক্ষমতার দাপটে এক নিরীহ নাগরিকের ন্যায়বিচারের আশার প্রদীপ ধীরে ধীরে নিভে যেতে বসেছে। জমি দখলের নামে দুষ্কৃতীরা একের পর এক অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে গেলেও প্রশাসন যেন ঘুমিয়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের নিজস্ব সম্পত্তির সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কিত, অথচ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের এই নীরবতা কেন? কোথায় সেই ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতি? নাকি প্রশাসনের কিছু অংশই ভূ-মাফিয়াদের রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছে?
মৌসুমী দাসের জমি দখলের ঘটনায় পুরো এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ফনি ভূষণ দাসের কন্যা মৌসুমী দাস, যিনি তার পৈতৃক সম্পত্তির যথাযথ অধিকারী, সেই জমি স্থানীয় ভূ-মাফিয়াদের দ্বারা জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। মৌসুমী দাসের বক্তব্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার বাবার দেওয়া সম্পত্তিতে বসবাস করে আসছিলেন, কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ভূ-মাফিয়ারা বেআইনিভাবে দলবল নিয়ে তার জমি আত্মসাৎ করেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মৌসুমী দাস রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন। প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, সমাজের জন্য এক অশনিসংকেত। নিজের পৈতৃক জমি হারিয়ে মৌসুমী দাস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা ভাবছেন, কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতা ও আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে তিনি দ্রুত সমাধানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। জমি দখলের মতো বেআইনি কাজ রুখতে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, যেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন এবং মৌসুমী দাস তার হারানো সম্পত্তি ফিরে পান।