
বেআইনি শেয়ার বাজারের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাজারো বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত, শ্রীভুমিতে মহাপ্রতারকদের বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা – পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ !
ড. নিখিল দাশ, বরাকবাণী,শিলচর,৩১ জানুয়ারিঃ শ্রীভুমি জেলার সাধারণ মানুষ আজ এক বড় প্রতারণার শিকার। শাকির, রশিদ, ও রাজদীপ নামে তিন মহাপ্রতারকের নেতৃত্বে একটি বিশাল প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে হাজারো মানুষের রক্ত-ঘাম ঝরানো টাকা আত্মসাৎ করেছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত বড় প্রতারণা চক্র সক্রিয় থাকার পরও প্রশাসন নির্বিকার। প্রতারকদের মূল কৌশল ছিল সাধারণ মানুষের কাছে শেয়ার বাজার ও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখানো। ‘অল্প সময়ে দ্বিগুণ লাভ’—এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলে। বহু মানুষ তাদের জীবনের সঞ্চিত অর্থ এই প্রতারকদের হাতে তুলে দেয়, বিশ্বাস করে যে তারা নিশ্চিত লাভ পাবে। কিন্তু কিছুদিন পরেই আসল চিত্র প্রকাশ পায়—টাকা ফেরতের কোনো নামগন্ধ নেই, বরং প্রতারকদের দালালরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। এই প্রতারক চক্রের মূল হোতারা এখনো পুলিশের নাগালের বাইরে। শাকির, রশিদ, রাজদীপ ও তাদের সহযোগীরা কালো রঙের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে বুক ফুলিয়ে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের দালালরাও একইভাবে বিলাসী জীবনযাপন করছে, যা দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে যে বিশাল অংকের কালো টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে, যেন তারা কিছুই জানে না! সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পুলিশের কাছে যাচ্ছেন, তখনও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন যে পুলিশ অভিযোগ নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রতারকদের দালালরা প্রভাব খাটিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখানোরও চেষ্টা করছে। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের এই নিরবতা কেন? প্রতারকরা কি কোনো রাজনৈতিক কিংবা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় রয়েছে? নাকি তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ‘ম্যানেজমেন্ট ফি’নেওয়া হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তবে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে, এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় অর্থ কেলেঙ্কারি ঘটতে পারে। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। অথচ শ্রীভুমি জেলার মানুষ আজ নিজেদের সম্পূর্ণ অসহায় মনে করছে। প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য প্রতারকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করা এবং এই প্রতারক চক্রের পেছনে থাকা গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি করছেন। জনগণ এখন পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে—আপনারা কি আসলেই জনগণের সেবক, নাকি প্রতারকদের রক্ষক? যদি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে প্রতারিত জনগণ রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এর দায় কে নেবে? এখন সময় এসেছে পুলিশের ঘুম ভাঙানোর, প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দেওয়ার। অন্যথায় করিমগঞ্জের মানুষ বুঝে নেবে, প্রশাসন ও প্রতারকদের মধ্যে পার্থক্য খুব একটা বেশি নেই!


উল্লেখ্য, অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে একদল শেয়ারবাজার প্রতারক। রাজদীপ, শাকির, মালুয়ার রশিদ ও মুস্তাফিজুর নামের কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধ ট্রেডিংয়ের নামে বিশাল প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে, যেখানে বিনিয়োগ করে বহু মানুষ আজ পথে বসেছে। শেয়ার বাজার সম্পর্কে কম অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করতে এই চক্র প্রথমে তাদেরকে বিশাল লাভের স্বপ্ন দেখায়। বিনিয়োগকারীরা অধিক মুনাফার আশায় নিজের সঞ্চয় তো হারিয়েছেই, এমনকি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েও এই প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়েছে। এখন অনেকেই মাসিক কিস্তি (EMI) দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, ফলে তাদের আর্থিক পরিস্থিতি চরম সংকটে পড়েছে। প্রতারকদের চালাকি এখানেই শেষ নয়। তারা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছে, দামি গাড়ি কিনেছে, বড় বড় অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবং সমাজে নিজেদের উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী হিসেবে তুলে ধরেছে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই তারা গায়েব! বিনিয়োগকারীরা যখন তাদের প্রাপ্য অর্থ চাইতে গেছে, তখনই এই প্রতারণার আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এখন প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও, এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার অবহেলার কারণে প্রতারকেরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে শেয়ার বাজার ও বিনিয়োগের নামে প্রতারণার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই দ্রুত লাভের আশায় অজানা বা অননুমোদিত সংস্থার প্রলোভনে পড়ে বিনিয়োগ করছেন, আর তাতেই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। শাকির ও তার দালালদের মতো প্রতারক চক্র ইতিমধ্যেই বহু মানুষের সঞ্চিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অথচ প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। প্রতিদিনই সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমে এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে, তবুও প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। ফলে প্রতারকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, এবং সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া ট্রেডিং প্রতারণার ঘটনা এখন চরম উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পলাতক রয়েছে দালাল আসফাক, মুন্না, যাওয়ারুল, ইফজাল, জাফর ও তামিম। প্রতারিত মানুষেরা তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছেন, কিন্তু দালাল চক্রের সদস্যরা যেন বেপরোয়া হয়ে আত্মগোপন করে আছে। বিশেষ করে, রাজদীপের টাকা কালেকশন করে দালালরা তাদের হাতে তুলে দিলেও, প্রকৃতপক্ষে কে কত টাকা দিয়েছেন, সেই হিসাব সম্পর্কে তারা পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। মানুষের গণদাবি সত্ত্বেও প্রশাসনের ভূমিকা এখনো সন্তোষজনক নয়। প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও বহু মানুষ প্রতারণার শিকার হতে পারে। সাধারণ মানুষের দাবি, প্রশাসনকে এখনই কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে, এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন মানুষের এই ক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রতি কতটা গুরুত্ব দেয় এবং কবে নাগাদ এই দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।