
ক্ষুব্ধ জনতার এনজিওর সভাপতি মানইমিয়া সহ কংগ্রেস নেতা সৈয়দ হোসেন আহমেদ
বরাকবাণী প্রতিনিধি মইনুল হক শ্রীভূমি ৩০শে জানুয়ারি: রাজ্যের বন্যাক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, প্রশাসনের গাফিলতিতে দক্ষিণ করিমগঞ্জের নিলামবাজার সার্কেলের কেউটকোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্তরা আজও সরকারি সহায়তা পাননি। দশ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারি তহবিল থেকে এক টাকাও জমা পড়েনি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ২০২৪ সালের জুন ও জুলাই মাসে একাধিক দফায় বন্যায় এই অঞ্চলের অন্তত ৮-১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, ফসল ও মাছ চাষের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার পরিবার দীর্ঘদিন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। আজও তাদের অনেকেই জীর্ণ বাড়িতে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন, অনেকের পক্ষে এখনও মেরামত সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় এনজিও ‘জনতার আওয়াজ’-এর সভাপতি মানই মিয়া ও শ্রীভূমী করিমগঞ্জ জেলা ইয়ং ব্রিগেড সেবা দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হোসেন আহমেদ সহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী সরকারের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রণয় সোম, বিশ্বজিত নমশুদ্র, সুশান্ত বিশ্বাস, মিনাদ আহমেদ ও আরিদ উদ্দিন সহ অনেকে জানান, সরকার বারবার ঘোষণা করলেও তারা কোনও সহায়তা পাননি।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গত আগস্টে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর ঘোষণা করেছিলেন যে ১৫ আগস্টের আগেই ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু হবে। পরে বলা হয় ১২ আগস্ট থেকে অর্থপ্রদান শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রীরা ঘোষণা করেন, ওই মাসের মধ্যেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু মাস পার হলেও কিছুই হয়নি। বর্তমানে রাজ্যের অন্যান্য জেলায় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হলেও রহস্যজনকভাবে নিলামবাজার সার্কেলের আলমখানী গ্রামের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ এখনও এক টাকাও পাননি। বিশেষ করে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহকেরা পুরোপুরি বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের বাড়ি ধসে পড়েছে, তারা এখনো অস্থায়ী আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ক্ষতিপূরণের আশায় থাকা কৃষকরাও হতাশ। সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করে বসে ছিলেন তারা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সাহায্য মেলেনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে বন্যার পরপরই সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদান করত, কিন্তু এবার দশ মাস পেরিয়ে গেলেও কিছুই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হলেও, এখনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। এ নিয়ে বন্যাক্রান্তদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জনতার আওয়াজ এনজিও, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে শীঘ্রই ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানাচ্ছে। তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল ও শ্রীভুমি জেলার জেলা শাসকের কাছে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের অর্থ সরবরাহের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে বঞ্চিত মানুষেরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।