
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ৫ সেপ্টেম্বরঃ ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে শিলচরের রাজনীতিতে এখন শুরু হয়েছে সরগরম জল্পনা। বিজেপির টিকিট কার হাতে উঠবে, এই প্রশ্নে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত কৌতূহলী। বর্তমান বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী যেখানে উন্নয়নমূলক কাজ ও আবেগঘন উদ্যোগের মাধ্যমে নিজের অবস্থান দৃঢ় করছেন, ঠিক সেখানে ময়দানে নেমে পড়েছেন নয়া মুখ তীর্থঙ্কর দেবরায় ও আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব।
পাশাপাশি নীরবে প্রতিযোগিতায় রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ কুমার পালও। ফলে, শিলচরে বিজেপির টিকিট দৌঁড় এখন একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আকার নিচ্ছে। বর্তমান বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী নির্বাচনের আগে শিলচর শহর ও উপকণ্ঠে একের পর এক প্রকল্পের শিলান্যাস করে নিজের উপস্থিতি আরও জোরদার করেছেন। সম্প্রতি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপন করে তিনি সাধারণ মানুষের আবেগে দাগ কেটেছেন। এই উদ্যোগকে শুধু শিলচরের মানুষ নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছেন। ফলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আসন্ন নির্বাচনে দীপায়নের টিকিট পাওয়া প্রায় নিশ্চিত।

তবে দীপায়নের বিপরীতে নিঃশব্দ প্রতিযোগিতায় রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল। তিনিও জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য মাঠে নেমেছেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা এখনও তাঁর সম্পদ। তবে দলীয় নেতৃত্বের অগ্রাধিকারে তাঁর ভাগ্যে কী রয়েছে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে আলোচিত নতুন মুখ তীর্থঙ্কর দেবরায় পাপ্পু।
সংঘ পরিবারের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে বহু বছর ধরে বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে জেলা বিজেপির মন কি বাত প্রমুখ হিসেবেও সক্রিয় রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি প্রতিদিনই দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, বিশেষ করে যাঁরা উপেক্ষিত বা ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন, তাঁদের খোঁজখবর নিয়ে সম্মানিত করছেন। তাঁর এই কৌশলকে রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে। অনেকে মন্তব্য করছেন, মাথার ওপর প্রভাবশালী রাজনৈতিক হাত না থাকলে এভাবে প্রকাশ্যে ময়দানে নামতেন না তীর্থঙ্কর। ফলে শিলচরে তাঁর সক্রিয়তা বিজেপির ভেতরে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে আইনজীবী ধর্মানন্দ দেবও আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় টিকিটের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। দীর্ঘদিনের পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং জনসংযোগের কারণে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে নীরবে শক্তি সঞ্চয় করেছেন। তাঁর আবেদন শিলচরের টিকিট দৌঁড়ে আরও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শিলচর আসনে এবার বিজেপির টিকিট নিয়ে চূড়ান্ত টানাপোড়েন দেখা যাবে। কারণ, দলীয় নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে—অনেক বর্তমান বিধায়ক টিকিট হারাতে পারেন।
এর ফলে তীর্থঙ্কর ও ধর্মানন্দের মতো নতুন মুখগুলো আলোচনায় উঠে আসছে। অন্যদিকে, দীপায়নের কাজ ও জনপ্রিয়তা তাঁকে শক্ত অবস্থানে রাখলেও দিলীপ পালের অভিজ্ঞতা এবং দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ভিত্তিও অগ্রাহ্য করা যায় না। সব মিলিয়ে শিলচরের বিজেপি রাজনীতিতে এখন রীতিমতো দাবা খেলা চলছে। একদিকে উন্নয়ন ও আবেগের রাজনীতি, অন্যদিকে সংগঠনের পুরানো শক্তি ও নতুন মুখের সক্রিয়তা এই দুইয়ের সংঘাতে ছাব্বিশের নির্বাচনে শিলচরের বিজেপি প্রার্থীর নাম নিয়ে জল্পনা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।