কাটিগড়া সমষ্টিতে রুরবান মিশন প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতি, বায়োফ্লক নির্মাণে গ্রামবাসীর বিস্ফোরক অভিযোগ

গ্রামীণ যুবকদের হাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলে দেওয়ার অজুহাতে এই প্রকল্পে বিপুল অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা কি সঠিকভাবে খরচ হয়েছে? মাঠ পর্যায়ের ছবিটাই উল্টো কথা বলছে। পূর্বতন দিগরখাল পাইকান জিপি ও বর্তমান রাজেশ্বরপুর জিপির গোবিন্দ কুপা গ্রামের বাসিন্দা বনস্পতি গোস্বামীর অভিজ্ঞতাই যেন গোটা দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি। তাঁর বাড়িতে বায়োফ্লক প্রকল্পের নামে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল।

অথচ আজ তা কার্যত ধ্বংসস্তূপ। বনস্পতি জানান, প্রকল্পের নামে একটি ট্যাংক তৈরি হলেও তাতে জল জমে না। মাত্র ৩০ ফুট গভীরতার একটি টিউবওয়েল খোঁড়া হলেও তা শুকনো মৌসুমে এক ফোঁটা জলও দেয় না। একটি বেনামি সংস্থার দেওয়া ক্ষুদ্র জেনারেটর দিয়ে পাম্প চালানো সম্ভব নয়। কাঠামোগুলি এতটাই দুর্বল যে, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা—কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি, আনুষঙ্গিক সামগ্রী সরবরাহ হয়নি, এমনকি আজ অবধি প্রকল্পটি তাঁর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরও করা হয়নি।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বনস্পতি বলেন, এই প্রকল্প বসানোর ফলে আমার বাড়ির একটা বড় অংশ অকেজো হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, কিন্তু আসল উন্নয়ন কোথায়? আমরা প্রতারিত। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা না নিলে আমি আইনের দ্বারস্থ হব। স্থানীয়দের দাবি, শুধু বনস্পতির বাড়ি নয়, গোটা কালাইন রুরবান ক্লাস্টার জুড়েই একই ছবি। প্রতিটি গ্রামেই বায়োফ্লক প্রকল্পের নামে খরচ দেখিয়ে বাস্তবে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। কোথাও ট্যাংকে জল জমে না, কোথাও জেনারেটর চলে না, কোথাও আবার মাটি চাপা পড়ে আছে পুরো প্রকল্প।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, আমরা ভেবেছিলাম রুরবান মিশন আমাদের নতুন রোজগারের পথ খুলে দেবে। কিন্তু সবকিছুই হলো প্রহসন। শুধু কাগজে উন্নয়ন, আসলে তো ভাঙা স্বপ্ন আর অপচয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এই বিপুল দুর্নীতি কার চোখের আড়ালে সম্ভব হলো? স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নের নাম করে প্রশাসনিক কর্তারা চোখ বুজে থেকেছেন। কোটি টাকার বরাদ্দ গিলে খাওয়া হয়েছে বেনামি সংস্থা ও কিছু প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে। গ্রামবাসীরা সরব, এখনই যদি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত না হয়, তবে গোটা প্রকল্পই ভেঙে পড়বে। রুরবান মিশনের লক্ষ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে।

গ্রামবাসী ও সচেতন মহলের দাবি, অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র সামনে আনা হোক। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, নইলে সরকারি প্রকল্পের প্রতি মানুষের বিশ্বাস চূর্ণ হয়ে যাবে। রুরবান মিশনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামকে শহরের সুবিধার সঙ্গে যুক্ত করা, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবসমাজকে শক্তিশালী করা। অথচ কাটিগড়ায় সেই প্রকল্পই আজ গ্রামীণ দুর্দশার দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Related Posts

মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…