
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ১৯ মেঃ ছাত্র নিগ্রহের অভিযোগে অবশেষে গড়াল প্রশাসনিক পদক্ষেপ। কাটিগড়া শিক্ষা খণ্ডের অন্তর্গত চন্দ্রনাথপুর এমই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৌসম দত্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বদলির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর শুরু হয় তদন্ত প্রক্রিয়া।
আর সেই তদন্তের পরেই শনিবার বদলির নির্দেশ জারি করে শিক্ষা বিভাগের সঞ্চালক সুরঞ্জনা সেনাপতি। বদলির নির্দেশিকায় স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৌসম দত্তকে বুরুঙ্গা এমই স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষকের পদে বদলি করা হচ্ছে। সেখানে তিনি আলি আহমেদ বরভুঁইয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন। শুধু বদলিই নয়, তাঁর এক বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বাতিল করা হয়েছে, যদিও এই সিদ্ধান্ত তাঁর ভবিষ্যৎ বেতনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না।
ঘটনার সূত্রপাত গত জানুয়ারি মাসে। অভিযোগ ওঠে, মৌসম দত্ত এক ছাত্রকে প্রকাশ্যে মারধর করেছেন। সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেই সূত্র ধরেই নড়েচড়ে বসে অসম মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের তরফে সুপারিশ করা হয় নিরপেক্ষ তদন্তের। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক শুনানি। তাতে উপস্থিত ছিলেন অভিযোগকারী রুবি চক্রবর্তীসহ একাধিক অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
কমিশনের তদন্ত কমিটি সমস্ত নথি, ভিডিও ফুটেজ এবং লিখিত বয়ান পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে আসে যে, অভিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করেছেন এবং তাঁকে অন্যত্র বদলি করাই শ্রেয়। শুধু ছাত্র নিগ্রহই নয়, ইউনিফর্ম বিতরণ নিয়েও ওঠে গুরুতর অভিযোগ। জানা গেছে, মৌসম দত্ত যথাসময়ে ছাত্রদের মাঝে স্কুল ইউনিফর্ম বিতরণে ব্যর্থ হন। উপরন্তু, প্রশাসনের তরফে নোটিশ জারি হওয়ার পরেও তিনি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান করেন, কিন্তু বাস্তবে একটিও ইউনিফর্ম ছাত্রদের হাতে পৌঁছায়নি।
বিষয়টি নজরে আসে সর্ব শিক্ষা অভিযানের কাছাড় ডিস্ট্রিক্ট মিশন কো-অর্ডিনেটরের (ডিএমসি)। স্কুলে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেন, পুরনো ইউনিফর্ম গুদামে পড়ে রয়েছে। পরে তিনি নিজেই ছাত্রদের মাঝে সেটগুলি বিতরণ করেন এবং দায়িত্বে গাফিলতির জন্য মৌসম দত্তকে সতর্ক করেন। ডিএমসি-র তরফে জানানো হয়, শিক্ষক দত্ত কার্যত চা-বাগানের অন্তর্গত দরিদ্র শিশুদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। যখন কেন্দ্রীয় সরকার পিএম-শ্রী স্কুলগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই সময়েও এই ধরনের গাফিলতি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা দপ্তর জানিয়ে দেয়, ছাত্রদের প্রতি শিক্ষক সমাজের আচরণে শালীনতা এবং দায়িত্বশীলতা থাকা আবশ্যক। কোনওরকম শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন সহ্য করা হবে না। ভবিষ্যতে এই ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কড়া নজরদারি এবং প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও স্পষ্ট করে দপ্তর।
শিক্ষক মৌসম দত্তের বিরুদ্ধে নেওয়া এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে শিক্ষক সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুর নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সুরক্ষা নিশ্চিত করাই যে সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার, এই ঘটনায় তা আবারও স্পষ্ট হল। একজন প্রধান শিক্ষক যদি নিজের আচরণে উদাহরণ তৈরি করতে ব্যর্থ হন, তবে তার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে তা এই ঘটনায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
ছাত্র নিগ্রহের অভিযোগ থেকে শুরু করে ইউনিফর্ম বিতরণে অনিয়ম—সব মিলিয়ে মৌসম দত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছিল। প্রশাসন যে আর চুপ করে বসে থাকতে রাজি নয়, সেটাই প্রমাণ করল এই শাস্তিমূলক বদলির সিদ্ধান্ত।