
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ৩মেঃ উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ে না। একদিকে নেই রাস্তা, নেই ব্রিজ, অন্যদিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে চলেছে অবৈধ ডিলিমিটেশনের খেলা। এরই প্রতিবাদে উত্তর করিমগঞ্জ বিধানসভা অন্তর্গত দক্ষিণকুল গ্রামে শুক্রবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন সম্পূর্ণভাবে ভোট বয়কট করলেন গ্রামের ১২৮৮ জন ভোটার। দক্ষিণকুল এলপি স্কুলে থাকা ৭১৫নং বুথের দু’টি ভোট কেন্দ্রেই একটিও ভোট পড়েনি।
প্রতিবাদের অন্যতম কারণ হিসেবে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, লামাজুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সংলগ্ন এলাকাতেই অবস্থিত দক্ষিণকুল গ্রামের ভোটারদের হঠাৎ করে প্রায় ২০ কিমি দূরের বাদেমহাকল পঞ্চায়েতে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা এই ডিলিমিটেশনকে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে এর পেছনে শাসকদল ঘনিষ্ঠ কিছু নেতার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সকাল থেকেই গ্রামের মানুষ দক্ষিণকুল এলপি স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে অনশন ও বিক্ষোভে বসেন। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দক্ষিণকুলকে পুনরায় লামাজুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তর্ভুক্ত না করা হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা কোনও অবস্থাতেই ভোটে অংশ নেবেন না।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেও ব্যর্থ হন ৭১৫নং বুথের সেক্টর অফিসার। তিনি ভোটারদের আশ্বস্ত করতে ও অনশন ভাঙাতে চাইলেও, কোনও ফল মেলেনি। গুয়াহাটি হাই কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী আবুল কাশীম তালুকদার, দক্ষিণকুল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সভাপতি রুহুল আমিন মিম, লামাজুয়ার জিপির প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল বাসিত সহ একাধিক সমাজপ্রতিনিধি এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ নুরুল হক এবং পোলিং অফিসার মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন রেখেও সারাদিন একটি ভোটও গ্রহণ করতে পারেননি। বুথ ফাঁকাই রয়ে যায়। গ্রামবাসীদের দাবি, বহু বছর ধরে তাঁদের এলাকায় কোনও রকম মৌলিক পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ব্রিজ—সবই অবহেলিত।
তাঁর উপর গায়ের জোরে করা এই ডিলিমিটেশন যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এই ঘটনা পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জনঅংশগ্রহণের প্রশ্নে বড় ধাক্কা দিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ শুধুই স্থানীয় উন্নয়নের প্রশ্ন নয়, গণতন্ত্র ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রতিও এক জোরালো প্রশ্ন তুলে দিল।