
বরাকবাণী প্রতিবেদন কচুদরম ২রা এপ্ৰিল: পালংঘাট ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর (এসএইচজি) কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ কেলেঙ্কারি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, সদ্য বরখাস্ত হওয়া জীবিকা সখী সালমা বেগম লস্কর, চাকরি থেকে নিলম্বিত ব্যাংক ম্যানেজার মনোজ কুমার দাস এবং পালংঘাট ব্লকের একাধিক বদলি হওয়া কর্মীদের যোগসাজশে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। প্রথমে ১১টি এসএইচজির ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ সামনে আসে। এরপর আরও ২৭টি এসএইচজির ৯৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা লুটের ঘটনা উদঘাটিত হয়। সর্বশেষ ব্লকের তদন্তে আরও ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ-এর নতুন তথ্য সামনে এসেছে। সব মিলিয়ে ৪০টি এসএইচজির ১ কোটিরও অধিক টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই অর্থ দিয়ে সালমা বেগম লস্কর বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি এবং জমি ক্রয় করেছেন।
এই ঘটনা সামনে আসার পর এসএইচজির দলনেত্রীরা পালংঘাট ব্লকের বিডিও রমেন দত্তের সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিডিও রমেন দত্ত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। তিনি অবিলম্বে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, যারা প্রতিদিন পাঁচটি করে এসএইচজির তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিডিওর কাছে প্রতিবেদন জমা করবেন। এই তদন্ত কমিটি ৮ এপ্রিলের মধ্যে ৪০টি এসএইচজির তদন্ত সম্পন্ন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ দেবে।
এতদিন ধরে এসএইচজির এই দুরবস্থা দেখে এলাকার সচেতন নাগরিকরা এগিয়ে আসেন এবং বজরং দলের সদস্যরাও তাদের পাশে দাঁড়ান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অবশেষে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, মহাশিবরাত্রির সময় একটি তদন্ত কমিটি ১১টি এসএইচজির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করলেও আজ পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি, যার ফলে এসএইচজির সভানেত্রী ও সম্পাদকরা নতুন করে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন। এখন দেখার বিষয়, ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কমিটি কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে এবং বিডিও রমেন দত্ত কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ঈদের পর কাছাড়ের জেলা শাসক, ডিআরডিএর পিডি এবং কাছাড় জেলা পরিষদের সিইও-এর কাছেও এই অভিযোগ দায়ের করার কথা রয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা ও তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও এসএইচজি সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসন যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তবে আরও বড় আকারের আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।