
হর্ষিত দত্ত বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ৩০ মার্চ: আত্মহত্যা নয়,আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।মূলত বিরাট আর্থিক নয়ছয় আড়াল করতেই বিভাগের জনা কয়েক কর্মী মিলে স্বামী দেবব্রত ডেকাকে হত্যা করেছেন। রবিবার এ অভিযোগ করেন শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতালের সদ্য প্রয়াত প্রশাসক দেবব্রত ডেকার স্ত্রী পূরবী ডেকা।
গত ২০ জানুয়ারি শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতালের এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার দেবব্রত ডেকা নিজ কোয়ার্টারের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতরভাবে আহত হন। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে শ্রীভূমি হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে মৃত্যু হয়। শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে তাকে জানানো হয় যে দেবব্রত ডেকা ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ।স্বামীর মৃত্যু সংবাদের খবর পেয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং পিতৃহারা নবজাতক শিশুকে নিয়ে কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। সূদূর মরিগাঁও থেকে দেবব্রত ডেকার বড়ো ভাই শিলচর মেডিক্যালে ছুটে আসেন এবং মৃতদেহ নিয়ে নিজ বাসভবনে যাবার পর সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য। সবকিছু শেষ করে মরিগাঁও থেকে তিনি শ্রীভূমি ছুটে আসেন এবং ২৭ জানুয়ারি শ্রীভূমি সদর থানায় মামলা নথিভুক্ত করেন। সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশের তরফে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তিনি ফিরে যান মরিগাঁও কিন্তু পরবর্তীতে শ্রীভূমি সদর থানা থেকে বার বার তাকে ফোনে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে জানান পূরবী ডেকা।
বাধ্য হয়ে স্বামীর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে তিনি নিজে মাঠে নামেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় মরিগাঁও থেকে শ্রীভূমি ছুটে আসেন এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি সদর থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়। এরই মধ্যে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে স্বামীর কোয়ার্টারে ছুটে গেলে সেখানে ব্যাপক বিসঙ্গতি চোখে পড়ে বলে জানান পূরবী ডেকা। বলেন দেবব্রত ডেকা যে কক্ষে থাকতেন সেখানে রক্তের দাগ দেখতে পান, চেয়ার ভেঙ্গে মাটিতে ফেলে রাখা ছিল এবং কোনো জরুরি নথিপত্রগুলো চারপাশে ছড়ানো ছিল। তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে জলের ট্যাঙ্ক দেখতে দিয়ে প্রশাসক দেবব্রত ডেকা ছাদ থেকে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন বাস্তবে তার কোনো মিল খুঁজে পাননি বলে জানান পূরবী ডেকা। বলেন ট্যাঙ্কের উল্টোদিকে পড়েছেন স্বামী দেবব্রত ডেকা। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাকে আত্মহত্যার রূপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও মূলত পরিকল্পিতভাবে তার স্বামী দেবব্রত ডেকাকে হত্যা করা হয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন পূরবী ডেকা। বলেন মূলত সরকারি হাসপাতালে প্রায় আশি লক্ষ টাকা আর্থিক নয়ছয় ধরা পড়ে প্রশাসক দেবব্রত ডেকার কাছে। তিনি ফাইলে স্বাক্ষর না করায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দু-একজন কর্মী গোটা ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেন পূরবী ডেকা।
তিনি আরও বলেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কোয়ার্টারে স্বামীর সঙ্গে বহুদিন বসবাস করেছেন এবং প্রায় প্রতিরাতেই বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম তার চোখে পড়েছে ।বিশেষ করে প্রকাশ নামের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী চিকিৎসক কোয়ার্টারে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম চালিয়ে গেছেন, যা তিনি নিজেও প্রত্যক্ষ করেছেন বলে জানান।এমনকি স্বামী দেবব্রত ডেকার মৃত্যুর পর তার মোবাইল ফোনটিও প্রকাশ নামের কর্মীর কাছ থেকে যেমন উদ্ধার করা হয়েছে তেমনি স্বামী দেবব্রত ডেকা নিজের ডায়েরিতে
হাসপাতাল কোয়ার্টারে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার কথা লিখে গেছেন, যা স্বযন্তে তিনি নিজের কাছে রেখেছেন বলে জানান পূরবী ডেকা।বলেন বৃহৎ অঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারি আড়াল করতেই স্বামী দেবব্রত ডেকাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তক্রমে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। হাসপাতাল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, উওর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রাজ্যসভার সাংসদ মিশন রঞ্জন দাস, জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের সক্রিয়তা কামনা করেন পূরবী ডেকা।এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ নামের কর্মীর মতামত জানতে চাইলে তিনি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন।