স্টক মার্কেট কেলেঙ্কারির মাস্টার মাইন্ড শাকির ও তার শিক্ষক ভাই জাবির কলকাতায় গ্রেপ্তার !

     উল্লেখ্য একশ বিশ শতাংশ বাৎসরিক লাভের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে শাকির স্টক লিমিটেড নামক ভুয়া বিনিয়োগ সংস্থার বিরুদ্ধে। করিমগঞ্জের বাখরশালে ট্রোলগেট এলাকায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অফিস চালিয়ে প্রতারক চক্রটি হঠাৎ করে গা ঢাকা দেয়। বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত না দিয়েই অফিস বন্ধ করে শাকির এবং তার সহযোগীরা উধাও হয়ে যায়। প্রতারিত হয়ে এক বিনিয়োগকারী আইনি পদক্ষেপ নিলে বদরপুর পুলিশ সক্রিয় হয় এবং মূল অভিযুক্ত শাকির, জাবির, শাকিল ও মুন্নাকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু করে। তবে কেলেঙ্কারির শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত। শাকির স্টক লিমিটেডের হয়ে কাজ করা ১৩ জন দালালের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার আশ্বস্ত করেছেন যে খুব শিগগিরই এদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। শাকির ও তার দালালরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথম দিকে কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে আংশিক লাভ দিয়ে প্রলুব্ধ করা হয়, যাতে আরও বেশি মানুষ বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। কিন্তু একসময় এই চক্র নিজেদের আসল রূপ দেখায় এবং সমস্ত অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে যায়। প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা এখন পথে বসেছেন। অনেকেই নিজের সঞ্চিত অর্থ, এমনকি ধারকর্জ করেও শাকির স্টক লিমিটেডে টাকা ঢেলেছিলেন। তাদের স্বপ্ন ছিল বড় লাভের, কিন্তু এখন তাঁরা একেবারে শূন্য হাতে। অনেকে বলছেন, এত বড় কেলেঙ্কারি কীভাবে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এতদিন চললো, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। বদরপুর পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়ভাবে তদন্ত করছে এবং দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন, এই ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে প্রশাসন আগেভাগে কেন ব্যবস্থা নেয়নি? কীভাবে একটি ভুয়া বিনিয়োগ সংস্থা এতদিন ধরে লোক ঠকিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারল?

     বরাক উপত্যকায় প্রতারণার রাজত্ব যেন থামার নামই নিচ্ছে না। একের পর এক নতুন প্রতারকের সন্ধান মিলছে, আর তাদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। করিমগঞ্জের আলোচিত প্রতারক রাজদীপ গ্যাং এবং তার দালালদের নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশ যেন রহস্যজনকভাবে নীরব। যেখানে শাকিরকে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হয়েছে, সেখানে রাজদীপ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। অথচ, বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, রাজদীপ ও তার সহযোগীদের নামে নতুন করে মামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে অসম পুলিশ। শিগগিরই হয়তো করিমগঞ্জের এই কুখ্যাত প্রতারককে আইনের জালে ফেলা হবে। সূত্রের খবর, রাজদীপের সহযোগী দালালরা—আসফাক, জাকার, ইফজাল, জসিম উদ্দীন বর্তমানে গুয়াহাটির এক ভাড়া বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশের একটি বিশেষ দল তথ্য সংগ্রহে নেমেছে। তবে বিনিয়োগকারীরা পুলিশের এই ধীরগতিতে অসন্তুষ্ট। রাজদীপ ও তার অন্যতম দালাল রশিদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ তুঙ্গে। বরাকবাণীর স্টিং অপারেশনে উঠে এসেছে এক ভুক্তভোগীর করুণ কাহিনি। তিনি রাজদীপ ও রশিদের হাতে পড়ে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। টাকা ফেরত না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। এমনকি একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। বর্তমানে তিনি রাস্তা-ঘাটে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিবার তাকে যতটা সম্ভব সামলানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পাওনা টাকা আদায়ের বিষয়ে আইনি পথে যেতে ভয় পাচ্ছেন। রাজদীপের বিশ্বস্ত দালাল রশিদ এখন গা ঢাকা দিয়েছে। তার ফোন বন্ধ, বাড়িতেও দেখা মিলছে না। অথচ সে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে রাজদীপের কাছে সরবরাহ করেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এখন নিজেরাই রশিদকে খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে। শুধু রাজদীপ-রশিদই নয়, বড়তলায় আরেক কুখ্যাত প্রতারক জসিম উদ্দীন ট্রেডিংয়ের নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে সে আত্মগোপনে। পাওনাদাররা প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন, কিন্তু পরিবারের কেউই তার পক্ষ নিচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, প্রতারকদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথেষ্ট কঠোর হচ্ছে না। রাজদীপ গ্যাং, রশিদ, জসিম উদ্দীনদের মতো প্রতারকদের দ্রুত গ্রেফতার না করলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের দাবি, তাদের কষ্টের টাকা যেন ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, না হলে বড় ধরনের গণবিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে। বরাকের সাধারণ মানুষ এখন পুলিশের কার্যক্রমের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা জানতে চায়—প্রতারকদের বিচার হবে তো? নাকি পুলিশের নির্লিপ্ততায় আরও অনেক নিরীহ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে?

উল্লেখ্য, এই কেলেঙ্কারি প্রথমে প্রকাশ্যে আসে বরাকবাণী পত্রিকার ধারাবাহিক তদন্তমূলক প্রতিবেদনের মাধ্যমে। সংস্থাটি একাধিক খবরের মাধ্যমে এই প্রতারণার পর্দাফাঁস করেছে এবং সাধারণ মানুষকে আগেভাগেই সতর্ক করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে পত্রিকার সাংবাদিক ও সম্পাদকের সাহসী প্রচেষ্টার ফলে অনেকেই সর্বস্ব খোয়ানোর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। বরাকবাণী পত্রিকা গোষ্ঠী এবং তাদের সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা। এক প্রতারিত বিনিয়োগকারী জানান, বরাকবাণীর সতর্কবার্তা আগে দেখলে হয়তো আমরা সর্বস্ব হারাতাম না। এই পত্রিকা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

Related Posts

মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…