কাছাড়ে ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবহেলা না দুর্নীতি?

ড. নিখিল দাশঃবরাকবাণী,শিলচরঃ১৮ জানুয়ারিঃ শিলচরের ঘনিয়ালা ইঅ্যান্ডডি রোডে রীতিমতো জেলা তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের চোখে ধুলো দিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসার নামে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এক মুন্না ভাই এমবিবিএস। মূলত হাইলাকান্দির বাসিন্দা আব্দুল হান্নান তালুকদার নামের ব্যক্তি নামের আগে অবৈধভাবে ডাঃ উপাধি লাগিয়ে চেম্বার বানিয়ে ফাঁদ পেতে বসেছে। শহরের একটি স্লাম এলাকা বেছে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীদের বোকা বানিয়ে একসময়ে বাঁশের ঘরে ভাড়া থাকা এই ভুয়া ডাক্তার এখন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। রাতারাতি জায়গা কিনে নেতা-মন্ত্রীদের থেকেও বিলাসী চারতলার বিরাট অট্টালিকা বানিয়েছে। এমন যাদুর মত তার ডাক্তারি ব্যবসার কৌশলে সকাল বিকাল রাত প্রায় সারাদিন সহজ সরল গরিব রোগীদের ভিড় লেগে থাকে তার আস্তানায়। সামান্য জ্বর কাশি পেট খারাপের ওষুধ নিতে তার হাতে গুনে দিতে হয় কমপক্ষে চার পাঁচশ টাকা। মানুষ সঙ্গে সঙ্গে একটু আরাম পেয়ে যায় বলেই ভিড় থাকে। যার জন্য রোজ ৪০-৫০ হাজার টাকা হাতে না এলে তার ঘুম আসে না বলে ঘনিষ্ঠ জনেরা জানান। তার ওষুধ দেখে অনেক সময় কোনও ভালো ডাক্তার বা শিক্ষিত মানুষের চোখ কপালে উঠে। তিন চারটি বিভিন্ন দুনম্বরি কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক একসঙ্গে রোগীকে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রশমিত করার কৌশল রয়েছে ওই তালুকদারের। যা শুধু অবৈধ, বেআইনি নয়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এসব ওষুধের সাইড এফেক্ট ধীরে ধীরে রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে নানা ব্যাধির সৃষ্টি করে বিপদ ডেকে আনে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। মানুষ এগুলো না জেনে তাৎক্ষণিক ফায়দার জন্য তাকে ভরসা করে এলাকার শ্রমিক মজুর দেহাতি মানুষ কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভুয়া এমবিবিএস ডিগ্রির সাইনবোর্ড লাগিয়ে সহজে কোটি পতি হয়ে বসেছে সে।

এলাকাবাসী জানান, কিছু অপরিচিত মানুষের আনাগোনা থাকে তার চেম্বারে। ওরা দুনম্বরি ওষুধ সাপ্লাই দেয় । তার দেওয়া ওষুধ শিলচর শহরের আর কোনও ফার্মেসিতে পাওয়া যায় না।‌ কিছু দিন আগে কাছাড়ের স্বাস্থ্য বিভাগ ভুয়া ডাক্তারের অভিযান চালিয়েছিল বিভিন্ন স্থানে। কয়েকজন ধরাও পড়েছিল। তখন সে তার সাইনবোর্ড নামিয়ে দেয়। দোকানও বেশ কয়েকদিন বন্ধ করে রাখে। তারপর ড্রাগ ইন্সপেক্টর সহ সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মোটা অংকের কমিশন দিয়ে ফের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সে নাকি মানুষকে এসব কথা বলে থাকে। অবৈধ কারবার করে কোটিপতি হয়ে যাওয়ায় তার সম্পত্তি সহ বেড়েছে অহংকার। কিছুদিন আগে তার ভাড়াটে এক ভিন্নধর্মী মহিলাকে মারধরের অভিযোগে সে ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। থানায় মামলা পর্যন্ত হয়েছিল। এভাবে অনেক অভিযোগ রয়েছে এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে। ভুল চিকিৎসায় অনেক রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কাছাড়ের ডিসির তত্ত্বাবধানে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সবকিছুই বেরিয়ে আসবে বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত।‌ এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালকের কাছে তাদের দাবি, কেন বার বার অভিযোগ উঠার পরও বহাল তবিয়তে চিকিৎসার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে ওই ভুয়া ডাক্তার। নাকি পেছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে?

 এলাকাবাসী জানান, এই সেদিন কয়েকবছর আগেও মানুষটির কিছুই ছিল না। ২০০১ বা ২০০২ সালে সামান্য সুদের কারবার শুরু করেছিল। তারপর জুয়া।  কিছুতেই কিছু হয়নি। তারপর কোথা থেকে সেলাইন, ইনজেকশন মারার কোর্স করে বাড়ি বাড়ি যাওয়া। এরপর লাইন খুলে যায়। অবৈধ ভুয়া ডাক্তার সেজে শুরু হয় রোগী দেখা ও ওষুধ দেওয়া। একজন প্রকৃত, সৎ  এমবিবিএস ডাক্তার কত কষ্ট করে পড়াশোনা করে সারাজীবন ডাক্তারি করে যে সম্পদ বানাতে পারেন না, হান্নান তালুকদার ঘনিয়ালায় ঘাঁটি গেড়ে ভুয়া ডাক্তার সেজে তাই বানিয়েছে। বর্তমানে একাধিক বাড়ি, প্রচুর জায়গা জমি ও একাধিক গাড়ি, বিলাসী বাইক রয়েছে তার।‌উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হলেই সবকিছু বেরিয়ে আসবে বলে জনগণের অভিমত। তারা কাছাড়ের ডিসি সহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য আধিকারিকদের এব্যাপারে দৃষ্টি দিতে দাবি জানিয়েছেন।

Related Posts

মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…