বেকার থেকে বিলাসবহুল জীবন: বদরপুরের মুন্না দালালের অঢেল সম্পদের উৎস নিয়ে জনমনে প্রশ্ন

ড. নিখিল দাশঃবরাকবাণী,শিলচরঃ১৭জানুয়ারিঃ বরাক উপত্যকার নিরীহ জনগণের কষ্টার্জিত টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে একটি প্রতারক চক্র। শাকির, রাজদীপ, রশিদ, মুস্তাফিজুর, সুফিয়ানসহ এই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা অনলাইন ট্রেডিং-এর নামে মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছিল। তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল বিনিয়োগের বিপরীতে বড় মুনাফা দেওয়া হবে। তবে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ারও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে টাকা ফেরত দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এই দিনটি বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশা নিয়ে আসে। একজনও বিনিয়োগকারীর হাতেও একটি টাকাও পৌঁছেনি। প্রতারণার শিকার হওয়া অসংখ্য পরিবার এখন চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে।

বদরপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই এক অন্ধকার চক্রের শিকার হচ্ছেন। এই চক্রের মূল মাষ্টার মাইন্ড বদরপুরের দালাল মুন্না, জাকার, আসফাকসহ আরও কিছু দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তারা ট্রেডিংয়ের নামে গরিব, নিরীহ মানুষের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করে বিলাসিতায় মগ্ন। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থে এতটুকু সহানুভূতি বা নৈতিকতার ধার ধারে না, বরং তাদের অপকর্মের জন্য বদরপুরের কলঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের জন্য বদরপুর দিনের পর দিন বদনাম হচ্ছে। একে এসব কুকর্ম জনসম্মুখে আসতে শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের গুঞ্জন রীতিমতো শোনা যাচ্ছে। অবৈধ ট্রেডিং এবং প্রতারণার মাধ্যমে তারা শুধু এলাকার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, তা নয়, গরিব মানুষদের জীবিকা ও ভবিষ্যৎও ধ্বংস করে দিয়েছে। এদের অবাধ কার্যকলাপের ফলে বদরপুরে দিন দিন দুর্নীতির কালো ছায়া আরও গভীর হচ্ছে। তাদের লোভের কাছে এলাকার সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পিষ্ট হচ্ছে।

অবৈধ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে আয় করা অর্থ দিয়ে বিলাসিতা দেখানোর ঘটনা বর্তমানে শ্রীভুমিসহ বিভিন্ন জায়গায় জনমনে চরম চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিশেষ করে, শাকির, রাজদীপ, রশিদ, সুফিয়ানদের মতো কিছু কম বয়সী ছেলেরা, যারা প্রায় সময় নতুন গাড়ি, মোবাইল ও অন্যান্য বিলাসবহুল সামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা স্থানীয় জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এমনকি তাদের দামী গাড়ির গ্যারাজে পরিণত হয়েছে, যেখানে কোনো সাধারণ কর্মী বা যুবকের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এদের এই বিলাসিতার পেছনে কি আসলেই কোনো বৈধ উৎস রয়েছে, নাকি এটি অবৈধ আয়ের ফল? মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এত কম বয়সী যুবকরা এত টাকা পেল, এবং তারা তাদের অঢেল সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে? অনেকেই মনে করছেন, এই সব যুবকেরা অবৈধ ট্রেডিং বা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে টাকা কামাচ্ছে, যা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

শাকিরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতারণামূলক চক্রের শিকার হয়েছেন বারাক উপত্যকার অসংখ্য বিনিয়োগকারী। এ চক্রটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ সংগ্রহ করে তা স্টক মার্কেটের নাম করে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছে। তবে, বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে শাকির তাঁর দালালদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ব্যবহার করছে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী, শাকির পলাতক থাকলেও তাঁর দালালদের পরিবারের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। দালালদের পরিবারের সুখ-দুঃখের খেয়াল রাখা এবং তাঁদের খরচ চালিয়ে যাওয়ার কারণে দালালরা শাকিরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ তুলছে না। এমনকি বিনিয়োগকারীরা যদি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেন, দালালরা বিভিন্ন কৌশলে তাঁদের বিভ্রান্ত করছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, শাকির এবং তাঁর সহযোগীরা তাঁদের কঠিন পরিশ্রমের উপার্জন আত্মসাৎ করেছে। শাকিরের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা—যেমন দালালদের দামি গাড়ি উপহার দেওয়া এবং বিভিন্ন রাজ্যে জমি কেনা—এই প্রতারণার চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

বদরপুরের খাদিমান এলাকায় শাকির ও তার সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার প্রতারণা করে মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করছে। শাকির, রাজদীপ, রশিদ, সুফিয়ান—এদের নেতৃত্বে এই প্রতারণার চক্র চলছে। যদিও শাকির নিজে গোপন আস্তানায় লুকিয়ে আছে, তার ডানহস্ত মুন্না দালাল বর্তমানে বিত্তশালী জীবনযাপন করছে। মুন্না, তার বিলাসবহুল বাড়ি, কোটি টাকার গাড়ি, এবং ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা নতুন ঘর নিয়ে এলাকায় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন। বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, এই টাকা তিনি পেলেন কোথা থেকে? এলাকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মুন্না সহ এই দালালচক্র ওলাইন ট্রেডিং এবং ভুয়া বিনিয়োগের ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যদি মুন্নাকে পুলিশি তদন্তের আওতায় আনা হয়, তবে এই প্রতারণার চক্রের আসল তথ্য উঠে আসতে পারে।

ক্ষোভে ফেটে পড়া বিনিয়োগকারীরা আইনের দ্বারস্থ হতে প্রস্তুত। তাদের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি—যতদিন তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত না দেওয়া হবে, ততদিন তারা এই প্রতারকদের রেহাই দেবে না। অনেকেই আইনের সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি বৃহৎ আন্দোলনেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ করে নিজেদের সম্পদ বাড়ানোর এই পরিকল্পনা যে কতটা নির্মম, তা এখন পুরো বরাকবাসীর কাছে পরিষ্কার। বিনিয়োগকারীরা এখন প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…