
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার কতটা সুরক্ষিত, এই প্রশ্নে এখন ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা শহর। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিসি অফিসের নির্বাচন শাখায় কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির কর্মী সৌমিত্র নাথকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগকারী মহিলা কর্মীও একই অফিসে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিযুক্ত।

দীর্ঘদিন ধরেই সৌমিত্র অফিসে তথাকথিত ‘বাবু সিণ্ডিকেট’এর প্রভাবশালী চাঁই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঘুষখোরি, তদবির, তোলাবাজি, এমনকি নারীকেন্দ্রিক অসভ্যতায়ও তাঁর নাম বারবার শোনা যেত। অবশেষে তাঁর কুকীর্তির বিস্ফোরণ ঘটল এক মর্মান্তিক ঘটনায়। ভুক্তভোগী মহিলা কর্মী শহরের এক ভাড়াঘরে একা থাকেন। বুধবার রাতে সৌমিত্র নাথ সেখানে গিয়ে কথোপকথনের আড়ালে হঠাৎই শারীরিক নির্যাতনে লিপ্ত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তিনি। ভুক্তভোগীর সাহসী পদক্ষেপে তিনি সঙ্গে সঙ্গে থানায় এজাহার দায়ের করেন। পুলিশের তৎপরতায় বৃহস্পতিবারই সৌমিত্রকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। বর্তমানে তিনি বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
এ ঘটনা নতুন কিছু নয়, বরং অনেক পুরোনো ক্ষতকে আবারও উন্মুক্ত করে দিল। ডিসি অফিস ঘিরে বছরের পর বছর ধরে যে ‘বাবু সিণ্ডিকেট’আছে, তাদের দাপটের খবর নতুন নয়। লবিবাজি, স্বজনপোষণ, ঘুষখোরি, দাপ্তরিক কাজের নামে তোলাবাজি আর নারী হয়রানির মতো অসংখ্য অভিযোগ উঠলেও বেশিরভাগ সময় সেগুলো ধামাচাপা পড়েছে। কিন্তু এবার ধর্ষণকাণ্ডের মতো ভয়াবহ অপরাধ গোটা ব্যবস্থার পচনকে জনসমক্ষে স্পষ্ট করে দিয়েছে। শিলচরের রাস্তাঘাট, চায়ের দোকান, রাজনৈতিক আড্ডা, সবখানেই এখন এই ঘটনার তীব্র আলোচনা।
সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, সরকারি অফিসে যদি একজন মহিলা কর্মী নিরাপদ না হন, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ?‘বাবু সিণ্ডিকেট’এর আসল রূপ কি এরকমই? নাগরিক মহলে দাবি উঠছে, শুধু সৌমিত্র নাথকে গ্রেফতার করলেই হবে না, পুরো সিন্ডিকেটকে ভেঙে চুরমার করতে হবে। নাহলে এমন অপরাধ বারবার ঘটবে, আর ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচারের আশায় পথ চেয়ে মরবেন।

এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো কঠোর প্রতিক্রিয়া আসেনি। এই নীরবতাই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলছে। মানুষ বলছেন, সরকারি দফতরের ভেতর যদি ‘মেয়েবাজি ও দালালি’চলতে থাকে, তবে প্রশাসনের প্রতি আস্থা থাকবে কোথায়? স্থানীয় সমাজকর্মী, নারী সংগঠন ও সচেতন নাগরিকেরা এই ঘটনাকে শহরের জন্য এক কলঙ্ক আখ্যা দিয়েছেন।
তারা বলছেন, এই কেলেঙ্কারি শুধু একটি নারীর জীবনে দুঃস্বপ্ন ডেকে আনেনি, বরং পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ধাক্কা দিয়েছে। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে শিলচরের ইতিহাসে এই অধ্যায় এক অন্ধকার দাগ হয়ে থাকবে। সারকথা, শিলচরবাসীর দাবি একটাই কেবল গ্রেফতার নয়, ‘বাবু সিণ্ডিকেট’এর আসল চেহারা সামনে আনা ও শেকড় উপড়ে ফেলা। নাহলে প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতি, লাম্পট্য আর ক্ষমতার অপব্যবহার যে আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নেবে, তা বলাই বাহুল্য।