
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ৫ সেপ্টেম্বরঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে কলমের লড়াই হবে, যেখানে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে আগামী দিনের নাগরিক সেই পবিত্র অঙ্গনেই আজ রক্তের দাগ! শিলচরের ঐতিহ্যবাহী কাছাড় কলেজে সাম্প্রতিক নৃশংস হামলার ঘটনায় গোটা জেলা স্তম্ভিত। ছাত্র নেতা চন্দন মজুমদার ও আমিনুল আহমেদ বড়ভূঁইয়ার উপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, তাতে একটাই প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষাঙ্গন কি তবে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে?
গত সপ্তাহে আচমকা কলেজ চত্বরে হামলার শিকার হন কাছাড় জেলা এনএসওয়াই নেতা চন্দন মজুমদার। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, কয়েকজন যুবক তাকে লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানে। রক্তাক্ত অবস্থায় সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। একইভাবে ছাত্র নেতা আমিনুল আহমেদ বড়ভূঁইয়াও গুরুতর আহত হন। অভিযোগ উঠেছে, হামলাকারীরা ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সক্রিয় সদস্য। যদিও সংগঠন পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে, তবুও কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটনার পর যে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়, তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে।

ঘটনার পরপরই জেলার বিভিন্ন মহল নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়েও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি কাছাড় পুলিশ। ফলে প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের এই অক্ষমতা কি নিছক ব্যর্থতা, নাকি এর আড়ালে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? সচেতন সমাজ বলছে, যদি এত বড় ঘটনা ঘটার পরও পুলিশ ব্যবস্থা না নেয়, তবে অভিভাবকরা সন্তানদের কোন ভরসায় কলেজে পাঠাবেন? চন্দন ও আমিনুলের উপর হামলার ঘটনায় জেলা কংগ্রেস তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জেলা কংগ্রেস নেতারা পুলিশের উদাসীনতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে পুলিশ সুপারের অফিসে স্মারকলিপি জমা দেন। আহত ছাত্রনেতার বাড়িতে যান এআইসিসির সম্পাদক তথা অসম প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিকাশ উপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন জেলার শীর্ষ কংগ্রেস নেতারাও। তারা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শিক্ষাঙ্গনে রক্ত ঝরিয়ে গণতন্ত্রের পাঠ শেখানো যায় না। একই সঙ্গে তারা প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি দোষীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা না হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
শুধু কাছাড় কলেজ নয়, অতীতেও শিলচরসহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংগঠনগুলোর সংঘর্ষ হয়েছে। বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কি তবে কোনো সংগঠিত চক্রের কাজ? অভিযোগ উঠছে, একদল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আড়াল থেকে ছাত্রদের উসকানি দিয়ে হিংসার বীজ বপন করছে। সমাজকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে নোংরা রাজনীতি চলছে তা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত। শিক্ষা যেখানে হওয়া উচিত জ্ঞানের আলো ছড়ানোর ক্ষেত্র, সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সভ্য সমাজের জন্য একেবারেই মানানসই নয়।
এখন প্রশ্ন একটাই—কাছাড় পুলিশ কি সত্যিই নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতে পারবে? নাকি অন্য ঘটনার মতো এ ঘটনাও সময়ের স্রোতে মিলিয়ে যাবে? সমাজের সচেতন অংশ প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ দেখতে চায়। কারণ যদি উদাহরণ তৈরি না হয়, তবে আগামী দিনে কলেজ-ভার্সিটি রণক্ষেত্রে পরিণত হতে সময় লাগবে না। আজ অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কলেজে পাঠানো মানেই কি অজানা আশঙ্কা বয়ে আনা? সন্তানদের ভবিষ্যৎ কি দলাদলি আর হিংসার অন্ধকারে ডুবে যাবে?
তাদের একটাই দাবি, আমাদের সন্তানের নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে দিন। চন্দন মজুমদার ও আমিনুল আহমেদ বড়ভূঁইয়ার উপর প্রাণঘাতী হামলা শুধু দুজন ছাত্র নেতার উপর আক্রমণ নয়, এটি গোটা শিক্ষাব্যবস্থার উপর আঘাত। তাই সময় এসেছে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার। নিন্দা, ক্ষোভ আর হতাশার আবহে গোটা সমাজ একসুরে বলছে, অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনুন। কারণ শিক্ষাঙ্গনে হিংসার পুনরাবৃত্তি যদি থামানো না যায়, তবে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।