
হর্ষিত দত্ত বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ৫ সেপ্টেম্বর গাফিলতির চরম উদাহরণ তৈরি হলো আবারও। চিকিৎসা পরিষেবার অদক্ষতা ও উদাসীনতার বলি হতে হলো এক ফুটফুটে আট মাসের শিশুকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতাল থেকে শিলচর মেডিকেল কলেজে রেফার করা হচ্ছিল ওই অসুস্থ শিশুকে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকায় রাস্তাতেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় শিশুটি। এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্থানীয় জনমহল ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এবং সরাসরি আঙুল উঠছে স্বাস্থ্য দপ্তরের গাফিলতি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দিকে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটি হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে নিয়ে আসা হয় শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর দ্রুত শিশুটিকে শিলচর মেডিকেল কলেজে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স মজুত না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিবার বেসরকারি একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে শিশুটিকে নিয়ে রওনা দেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাখরশাল এলাকায় পৌঁছতেই শিশুটি প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করে। সেই মুহূর্তে অক্সিজেন দেওয়া জরুরি হলেও অ্যাম্বুলেন্সে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি।

ঘটনার পরেই পরিবারের অভিযোগ, যদি হাসপাতালের কাছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকতো কিংবা অন্তত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকতো, তাহলে আমাদের সন্তানকে আজ এভাবে হারাতে হতো না। শিশুটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবার এই শোচনীয় অবস্থার জন্য সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় আধিকারিকদের।
মানুষের প্রশ্ন, রোগী যখন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় থাকে তখন চিকিৎসকেরা কেন নিশ্চিত করেন না যে যে গাড়িতে রোগী পাঠানো হচ্ছে তাতে জরুরি জীবনদায়ী সামগ্রী অক্সিজেনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে কি না? এমন ঘটনার পর স্বাস্থ্যব্যবস্থার গাফিলতি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ চরমে। চিকিৎসার নামে এই ধরনের অবহেলার ফলে একের পর এক নিরীহ প্রাণ ঝরে পড়ছে। স্থানীয় মানুষের দাবি, এভাবে অক্সিজেনের অভাবে শিশুর মৃত্যু হলে তার দায়ভার কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেবে? নাকি প্রতিবারই নিরীহ পরিবারগুলোকে এভাবেই মূল্য চোকাতে হবে?
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সটিকে বাজেয়াপ্ত করে চালককে আটক করেছে। শিশুটির মৃতদেহ মরণোত্তর পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। এই ঘটনার জেরে এলাকায় একরাশ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, কেন শ্রীভূমি সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের মতো মৌলিক সুবিধা মজুত থাকবে না? বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যদি অক্সিজেনই না থাকে তবে এমন গাড়িকে রোগী পরিবহনের অনুমতি দেয় কে?
বারবার এমন দুর্ঘটনার পরেও স্বাস্থ্য দপ্তর নীরব কেন? স্থানীয় মানুষ ও সামাজিক সংগঠনগুলো এখন একসুরে দাবি তুলেছে, দোষী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। আট মাসের এক নিরপরাধ শিশুর মৃত্যু গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্র আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রশ্ন উঠছে, এই মৃত্যুর দায় কে নেবে? নাকি সবকিছু চাপা পড়বে কিছু দিন পরেই তদন্তের নামে কাগজপত্রের গহ্বরে?