
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি ১৯ মেঃ সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হতেই রাজ্য জুড়ে ‘মিশন ছাব্বিশ’ এর চর্চা শুরু হয়ে গেছে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল যখন আগামী বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় বরাক উপত্যকার রাজনৈতিক সমীকরণে এক নতুন মোড় নিতে চলেছে সংখ্যালঘু ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, কংগ্রেস বরাক উপত্যকায় শুধুমাত্র সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেই কিছুটা ভালো ফল করেছে। তবে সংখ্যাগুরু হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে কংগ্রেস কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। করিমগঞ্জ জেলার একসময়ের কংগ্রেস দুর্গ বলে পরিচিত বহু এলাকা থেকেও এবারে একজনও জেলা পরিষদ সদস্য জিতিয়ে আনতে পারেনি দলটি। এই ব্যর্থতা কংগ্রেসের সংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনসংযোগহীন রাজনীতিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা থাকলেও, সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে কংগ্রেসের প্রতি আস্থা যে কমছে তা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে এআইইউডিএফ এর অনুপস্থিতি বরাক উপত্যকার নির্বাচনে স্পষ্ট ছিল, তবুও কংগ্রেস তাদের পূর্ণ সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এরই মধ্যে এআইইউডিএফ-এর অন্দরমহল থেকে জানা যাচ্ছে, দল এবার পূর্ণ উদ্যমে মিশন ছাব্বিশে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত।
বিশেষ করে করিমগঞ্জ জেলার দুটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসন দক্ষিণ করিমগঞ্জ এবং উত্তর করিমগঞ্জ নিয়ে এআইইউডিএফ গভীর পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, এই দুই আসনে দল হেভিওয়েট প্রার্থীদের টিকিট দিতে পারে। যদিও কারা প্রার্থী হবেন, সে বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি, তবে দক্ষিণ করিমগঞ্জে একজন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং উত্তর করিমগঞ্জে এক প্রভাবশালী সমাজকর্মীর নাম উঠে আসছে।
এছাড়াও বরাক উপত্যকার অন্যান্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা যেমন আলগাপুর-কাটলিছড়া ও সোনাইতেও ইউডিএফ প্রার্থীদের টিকিট দিতে পারে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে এই দুই আসনে দলের বর্তমান বিধায়করাই পুনরায় প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। দলের এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এবং ময়দানে দলীয় অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে আজমল ব্রিগেড আগেভাগেই মাঠে নামতে পারে।
বরাক উপত্যকার মধ্যে বিশেষত করিমগঞ্জ জেলাকে ঘিরে দলের পরিকল্পনা অনেকটাই সুস্পষ্ট। বর্তমান জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। জেলা সভাপতি বিগত দিনে দলকে মজবুত করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধুবড়ি, বরপেটা ও নওগাঁও জেলায় এআইইউডিএফ সামান্য হলেও প্রার্থী জিতিয়ে আনতে সক্ষম হলেও বরাকে ফলাফল শূন্যই থেকেছে, যা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভাবাচ্ছে।
ফলে মিশন ছাব্বিশের আগে করিমগঞ্জ জেলা শাখায় বড়সড় রদবদলের সম্ভাবনা প্রবল। জেলা সভাপতি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের বদলি করে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তাভাবনা চলছে। এমনকি দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দিতে শুরু হতে পারে ধারাবাহিক সভা, জনসংযোগ অভিযান এবং মাটি পর্যায়ে সাংগঠনিক বিস্তার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এআইইউডিএফ যদি হেভিওয়েট প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে এবং সময়মতো সাংগঠনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারে, তবে বরাক উপত্যকার সংখ্যালঘু রাজনীতিতে তারা আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। আজমল ব্রিগেডের নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ যে আবার নতুন উদ্যমে ময়দানে নামতে চলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে প্রতিটি পদক্ষেপেই।
শেষ কথা, ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণ নয়, বরং সংগঠনের দৃঢ়তা, প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা এবং মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের লড়াইও বটে। আর এই লড়াইয়ে এআইইউডিএফ নিজের পুরনো জমি ফিরে পাবে কিনা, তা নির্ভর করবে আগামী কয়েক মাসের রাজনৈতিক কৌশল ও মাঠ পর্যায়ের কর্মতৎপরতার উপর।