
বরাকবাণী প্রতিবেদন শ্রীভুমি ১৯ মেঃ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দক্ষিণ আসাম প্রান্তের সংঘ শিক্ষা বর্গ প্রথম বর্ষ সামান্য ও বিশেষ এর সমাপন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হলো মাধবধামে। রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় স্বাগত প্রণাম, এরপর ধ্বজোত্তোলন ও প্রার্থনা। তারপর শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। পরিচয় প্রদান ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বর্গ কার্যবাহ সুরজিত থাউসেন।
প্রতিবেদন পাঠ করেন বর্গের সর্বাধিকারী মাননীয় লালমোহন নাথ। উল্লেখ্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, দক্ষিণ আসাম প্রান্তের ব্যবস্থাপনায় সংঘ শিক্ষা বর্গ বিগত ৩ মে বিকেল থেকে আরম্ভ হয়। দক্ষিণ আসাম প্রান্তের সংঘ শিক্ষা বর্গ গত ৩ মে সন্ধ্যা ০৬:৪৫ মিনিটে ভারতমাতার প্রতিকৃতির সম্মুখে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সূচনা করেন সংঘের দক্ষিণ আসাম প্রান্ত সংঘচালক শ্রদ্ধেয় জ্যোৎস্নাময় চক্রবর্তী, অখিল ভারতীয় কর্যকরিণী সদস্য উল্লাস কুলকার্ণি, সর্বাধিকারী লালমোহন নাথ ও বর্গ কার্যবাহ সুরজিত থাইসেন।
সংঘ কার্যের প্রসার ও সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য আবশ্যক যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত কার্যকর্তা নির্মাণের জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এই বছর ও দক্ষিণ আসাম প্রান্তের শ্রীগৌরী স্থিত মাধবধামে এই বর্গ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দৃষ্টিতে দক্ষিণ আসাম প্রান্ত বরাক উপত্যকা, ডিমা হাসাও জেলা এবং মিজোরাম রাজ্য নিয়ে গঠিত। সংঘের দৃষ্টিতে ১২ জেলায় বিভক্ত। এই প্রান্তের ১২ জেলার ৫২ স্থান থেকে মোট ৬৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত ছাত্র, ব্যবসায়ী এবং চাকুরীজীবি স্বয়ংসেবক বিদ্যমান, এদের মধ্যে বাংলা, নেপালী, হিন্দি, চা-জনজাতি, ডিমাসা, রিয়াং, মণিপুরী প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষাভাষীর শিক্ষার্থীরা এক সাথে এই বর্গে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
সংঘ শিক্ষা বর্গ যাতে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুচারু রূপে সম্পন্ন হয় এর জন্য বর্গে ১২ জন শিক্ষক এবং এবং বিভিন্ন বিভাগে ১২ জন প্রবন্ধক নিযুক্ত ছিলেন। সকল শিক্ষক ও প্রবন্ধক দক্ষিণ আসাম প্রান্তের প্রশিক্ষিত স্বয়ংসেবক, কার্যকর্তা, সংঘ প্রচারক ও বিস্তারক ছিলেন। সংঘ শিক্ষা বর্গে প্রতিদিন ভোর ৪ টায় জাগরণ থেকে ৯ টা ৪৫ মিনিটে দীপ নির্বাপন পর্যন্ত শারীরিক ও বৌদ্ধিক কার্যক্রমে ভরপুর ছিল প্রতিদিনের প্রশিক্ষণ সূচি ও দিন চর্চা।
সকাল ৪:৪৫ মিনিটে একাত্মতাস্ত্রোত্রম অর্থাৎ ভারতমাতার বন্দনার মাধ্যমে ভারতের পবিত্র নদনদী, পাহাড়-পর্বত, বেদ-পুরান, মুণি-ঋষি, মহাপুরুষ বীর-বীরাঙ্গনা, সমাজ শাস্ত্রী ও সমাজের বিভিন্ন প্রান্তঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের স্মরণ করে প্রতিদিনের কার্যক্রম আরম্ভ করা ছিল নিত্য শিক্ষণ সূচীর প্রথম বিষয়। প্রতিদিন সকাল ও বিকাল মিলিয়ে মোট চার ঘন্টার শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং ৪ ঘন্টা ২৫ মিনিটের বৌদ্ধিক বিভাগের প্রশিক্ষণ হয়।
শারীরিক প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল-দণ্ড, নিঃযুদ্ধ, দণ্ড যুদ্ধ, যষ্ঠি, পদবিন্যাস, সমতা, সামূহিক সমতা, যোগাসন, ব্যায়াম যোগ, খেলা এবং ঘোষ (সংঘের বাদ্যযন্ত্র) ইত্যাদি। শারীরিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ, আত্মরক্ষা, নিজেকে সুস্থ রাখা এবং অনুশাসনের মূখ্য পাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বৌদ্ধিক বিষয়ের মধ্যে ছিল সংবাদ সত্র, চর্চা, বৌদ্ধিক অভ্যাস ও রাত্রি কালাংশ। সায়ম সংঘ স্থানের পর যথাক্রমে অভ্যাস ও শিক্ষার্থী সহভাগ কার্যক্রম বৌদ্ধিক বিভাগের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। রাত্রি ০৯:৪৫ মিনিটে দীপ নির্বাপনের সাথে সাথে প্রতিদিনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ইতি টানা হতো।
বর্গ চলাকালীন সর্বমোট ২ জন সংঘের কেন্দ্রীয় স্তরের কার্যকর্তা, ৭ জন ক্ষেত্র স্তরের কার্যকর্তা এবং ১৪ জন প্রান্ত স্তরের কার্যকর্তা বর্গে প্রবাস করেন। উক্ত প্রবাসকালিন সময়ে উনারা প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কার্যক্রম, যথাক্রমে শারীরিক, বৌদ্ধিক, সম্পর্ক, ব্যবস্থা, চর্চা, সংবাদ সত্র ও রাত্রিকালীন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে শিক্ষাবর্গও বর্গ পরিচালনায় নিয়োজিত সকল স্বয়ংসেবক ও কার্যকর্তাদের মার্গ দর্শন করেন।
উক্ত সমারোহে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিলচর পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ ডঃ সঞ্জীব সিংহ মহাশয়। তিনি বলেন সংঘের কাজ সকলকে অভিভূত করছে। সমাজ সংস্কার কিংবা শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে সংঘ। সে জন্য সংঘ আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংঘের স্বয়ংসেবকরা নিজের কাজের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে আসছে।
মানুষ যখন মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করে তখন সে কাজ সফল হয়। আগামীদিনে সংঘ আরো মহীরুহ হয়ে উঠবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান অতিথি। এদিন মুখ্য বক্তা হিসাবে বক্তব্য প্রদান করেন সংঘের আসাম ক্ষেত্র প্রচারক শ্রীযুক্ত বশিষ্ঠ বুজরবরুয়া। তিনি বলেন ভারত পূণ্যভূমি কর্মভূমি ও ধর্মভূমি। মহাপুরুষদের উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেন ভারতবর্ষে সন্তান হিসাবে জন্ম নেওয়া সৌভাগ্যের কথা।
তিনি সমাজে রাষ্ট্রীয়তার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তার সাথে রাষ্ট্রীয় ভাবধারা ও হিন্দু সভ্যতার বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। সংঘের রাষ্ট্রহিত ও ভারতীয় দর্শনের কথা বলেন। তার সাথে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি আলোকপাত করেন। বৌদ্ধিক প্রদানকালে তিনি আরো বলেন মানব জীবনে অনুশাসন জীবনযাপন ও রাষ্ট্রীয় ভাব ধারার চেতনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন স্বয়ংসেবকরা নিজেদের কার্য পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জৈবিক কৃষি, আর্থিক সবদিক দিয়ে-ভারতীয়রা অনেক এগিয়ে। ফলে ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে স্বয়ংসেবকদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে। বক্তব্যর শেষ দিকে তিনি সমাজকে পর্যাবরন, আদর্শ হিন্দু পরিবার, সামাজিক সমরসতা, স্বদেশী পন্যর ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন ও নাগরিকদের শিষ্টাচার এই সব কয়েকটি বিষয়ের উপর সংকল্প নিতে আহ্বান জানান।
সমারোপে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রান্তের বিভিন্ন বিভাগের কার্যকর্তা, সংঘের বিভিন্ন ভাতৃ সংগঠনের কার্যকর্তা, স্বয়ং সেবক ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখ্য প্রধান বক্তার বৌদ্ধিকের সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলেও স্বয়ংসেবকরা একচুলও নড়চড় করেননি। উপস্থিত অতিথিরা স্বয়ংসেবকদের শিষ্টাচারের পরিচয় পান।