
বরাকবাণী প্রতিবেদন লক্ষ্মীপুর ১৯ মেঃ দেশপ্রেম মানে শুধু পতাকা ওড়ানো নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বাজি রেখে দেশের শত্রুকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াও দেশপ্রেম। আর এই আদর্শকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন কাছাড় জেলার লক্ষীপুর এলাকার বীর সন্তান অবসরপ্রাপ্ত সেনা ক্যাপ্টেন খোগেন্দ্র সিং। যিনি প্রায় চার দশক ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গর্ব হিসেবে দেশের উত্তর সীমান্তে নজিরবিহীন সাহসিকতা ও নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে গেছেন। ৩৭ বছরের বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনে ক্যাপ্টেন খোগেন্দ্র সিং জম্মু-কাশ্মীর থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিজের শৃঙ্খলা, সাহস ও নেতৃত্বগুণে তিনি বহু সন্ত্রাসী দমন অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু যেটি আজও সেনা ইতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে আছে, সেটি হলো, তার নেতৃত্বে পরিচালিত এক গোপন ও দুর্ধর্ষ অভিযান I একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময় তার দল হঠাৎ এক আল-কায়েদা হামলার মুখোমুখি হয়। সেই হামলায় তার দলের এক সাহসী সৈনিক শহীদ হন। সঙ্গীর মৃত্যুতে দুঃখ নয়, জ্বলন্ত প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে ক্যাপ্টেন খোগেন্দ্র সিং-এর চোখে। তিনি তৎক্ষণাৎ পাল্টা আক্রমণের নির্দেশ দেন।
অভিযানে তার বাহিনীর গুলিতে ৫ জন সন্ত্রাসী গুরুতর আহত হয় এবং সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি ক্যাপ্টেন। দেশের গৌরব রক্ষার শপথ নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানের সীমান্তে প্রবেশ করেন। অতিসাবধানে, কৌশলে তিনি এবং তার দল সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানা খুঁজে বের করেন। শুরু হয় সীমান্তের ওপারে এক নজিরবিহীন অভিযান, সেখানে তিনি ঐ পাঁচ জঙ্গিকে হত্যা করেন এবং তাদের শিরশ্ছেদ করে ভারতের মাটিতে ফিরিয়ে আনেন, যেন গোটা বিশ্ব জানে ভারতের একজন সৈনিকের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এ
ই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ক্যাপ্টেন খোগেন্দ্র বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে এক সহযোদ্ধার মৃত্যুর প্রতিশোধ না নেওয়া মানেই তার আত্মত্যাগকে অসম্মান করা। আমি তাদের শিরশ্ছেদ করে ফিরিয়ে এনেছিলাম, যাতে জাতি দেখে—আমাদের সাহস কতটা।
সম্প্রতি সেনাবাহিনীর আধুনিক সক্ষমতা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সিন্দুর’ দেখে পুরনো স্মৃতিতে ভেসে যান এই বীর সেনানী। বলেন, আমাকে সিপিআই অবসর দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমি এখনো সেনার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত। আজও যদি ডাক আসে, আমি আবার শত্রুর গলায় তলোয়ার চালাতে প্রস্তুত। আমার রক্তে দেশপ্রেম এখনো আগুনের মতো জ্বলছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ভারতীয় সেনাবাহিনী আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, পাকিস্তান তো দূরের কথা, বিশ্বের কোনো শক্তিশালী দেশও যদি ভারতের দিকে কু-নজরে তাকায়, তবে তার ফল ভয়াবহ হবে। ক্যাপ্টেন খোগেন্দ্র সিং-এর এই গৌরবগাথা আজ শুধুমাত্র কাছাড় নয়, গোটা অসম তথা ভারতবর্ষের জন্যই এক গর্বের ইতিহাস। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় যেন সাহস, কর্তব্য ও আত্মবলিদানের প্রতীক। এমন বীর সন্তানদের কাহিনী শুধু ইতিহাস নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পাথেয় হয়ে উঠুক এই প্রার্থনাই দেশবাসীর।