
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি ১৯ মেঃ সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের তরফ থেকে জয়ী প্রার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়ার নামে এক জাঁকালো সভার আয়োজন করা হলেও, শেষপর্যন্ত তা রূপ নেয় তীব্র অশান্তি ও দলীয় অন্তর্কলহে। শনিবার করিমগঞ্জ শহরের একটি অভিজাত হোটেল অলিচা-তে আয়োজিত এই সংবর্ধনা সভায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি রজত চক্রবর্তী, সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরী শামিম, এবং কংগ্রেস নেতা বিশ্ব ঘোষের নেতৃত্বে নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্যদের সম্মান জানানো হয়।
তবে এই সভা ঘিরে দলে দলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়, কারণ অনেক ত্যাগী কর্মী ও যুব কংগ্রেস নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি যারা পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় মাঠে-ময়দানে নিরলস পরিশ্রম করেছেন, তাদেরও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই নির্বাচনে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস মোট ষোলটি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জয়লাভ করেছে। আর এই পাঁচটির অধিকাংশই নব্বই শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের এলাকা। হিন্দু অধ্যুষিত কোনো একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি কংগ্রেস, এমনকি পাথারকান্দি ও রাতাবাড়ী অঞ্চলের বহু আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এই সংবর্ধনা সভায় যুব কংগ্রেসের নেতারা আমন্ত্রিত না হওয়ায় প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। যুব কংগ্রেস নেতা রাজন চৌধুরী, আশরাফনূর চৌধুরী, রাইজ চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক আহমেদ সাহিল এবং ইয়ং ব্রিগেড সেবা দলের সভাপতি সন্দীপ নন্দী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা অভিযোগ করেন, কংগ্রেস কারোর পৈতৃক সম্পত্তি নয়। যাঁরা বাস্তবে কোন কাজ করেননি, তাঁদেরকে মঞ্চে বসিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে আর যারা পরিশ্রম করেছেন, তাঁরা উপেক্ষিত!
গ্রামীণ করিমগঞ্জের একাধিক কংগ্রেস কর্মী অভিযোগ করেন, শহরের কিছু কংগ্রেস নেতারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে অবহেলার আচরণ করে আসছেন। বদরপুরের চৈতন্যনগর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জাকারিয়া আহমেদ পান্নার ঘনিষ্ঠ লামাজুয়ার আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য আলমিন আহমদ জানান, বিশ্ব ঘোষের দুর্ব্যবহারের কারণে সাধারণ কর্মীরা কংগ্রেস অফিসে যেতে ভয় পান।
তিনি সভায়ও আমাদের কুরুচিকর ভাষায় অপমান করেছেন। তাদের দাবি, সংবর্ধনা সভায় উত্তর করিমগঞ্জের টিকিট প্রত্যাশী নেতা আহমেদ সাহিল ও জাকারিয়া আহমেদ পান্নাকেও মঞ্চে ডাকেননি রজত ও শামিম। কংগ্রেস অফিসের পরিবর্তে হোটেল অলিচায় সভা আয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেক নেতা। তাদের কথায়, “রজত চক্রবর্তীর উদাসীনতায় জেলা কংগ্রেস অফিস আজ মৃতপ্রায়।
ভোটের দিন পর্যন্ত অফিসে বাতি জ্বলে না, তাহলে সংবর্ধনার নাম করে হোটেল ভাড়া করে কী বার্তা দেওয়া হল? এর মধ্যেই ফের একবার কংগ্রেস টিকিট বাণিজ্যের অভিযোগে সরব হয়েছে শ্রীভূমি জেলা। শ্রীমন্ত কানিশাইল-বাশাইল জেলা পরিষদ আসনের টিকিট প্রত্যাশী সেলিম উদ্দিন এক ফেসবুক পোস্টে সরাসরি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস নেতা আমিনুর রশীদ চৌধুরী শামিম টাকা নিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের টিকিট দিয়েছেন। তিনি একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে শামিমের বেডরুমে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতে দেখা যাচ্ছে এবং আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছেন টিকিট প্রত্যাশীরা।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ফখরুল ইসলাম নিজের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে এই ছবি শেয়ার করে মন্তব্য করেন, এখন কংগ্রেসীরাও টাকার বিনিময়ে টিকিট লেনদেন করছেন। আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়েছেন তাঁরা। এই পোস্টে করিমগঞ্জ কংগ্রেস সম্পাদক ফয়জুর রহমান মন্তব্য করেন, এখানে দশ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।
এই দুর্নীতি ও দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে আসার পর করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসে একরকম ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। ঘন ঘন বৈঠক হচ্ছে শহরজুড়ে। জেলার অনেক কংগ্রেস কর্মী ও পদাধিকারীরা সরবভাবে দাবি তুলেছেন, রজত চক্রবর্তী ও বিশ্ব ঘোষের ব্যর্থতা স্পষ্ট।
নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে, না হলে করিমগঞ্জে কংগ্রেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। জেলা সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে বারংবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি বা কোনও মন্তব্য করেননি। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে দলের অভ্যন্তরেও এই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যদি দ্রুত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে করিমগঞ্জ জেলায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।