শিলচর শহরতলির মাছিমপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিমেষেই ছারখার তিনটি দোকান, লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি

দোকানপাটে ব্যস্ততা যখন ধীরে ধীরে কমে আসছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় আগুনের তাণ্ডব। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে একটি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। স্থানীয়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন লেলিহান শিখায় রূপ নেয় এবং দ্রুত পাশের দুটি দোকানকেও গ্রাস করে ফেলে। আগুনের তীব্রতায় মুহূর্তের মধ্যেই তিনটি দোকান পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।

দোকান মালিকরা তখনো দোকানের ভেতরে ছিলেন। কেউ কেউ দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় এই বিপর্যয় তাদের সামনে হাজির হয়। চোখের সামনে জীবনের সম্বল হারাতে দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। একটি দোকানের মালিক জানান, তাঁর দোকানে সদ্য মজুত করা মালপত্র সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, সারা বছরের সঞ্চয় বিনিয়োগ করে দোকানে নতুন মাল এনেছিলাম, সব কিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অরুণাচল পুলিশ। শুরু হয় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এবং দোকানের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিলচর থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসে দমকল বাহিনীর দুটি গাড়ি। কিন্তু, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিববাড়ি এলাকায় চিরাচরিত ট্রাফিক জ্যামের কারণে দমকল বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলত, যে সময়ে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসা উচিত ছিল, সেই সময়ে আগুন তার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে তিনটি দোকানকে গ্রাস করে ফেলে।

অবশেষে দমকল বাহিনীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও বড় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষাধিক টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনটি দোকানই মালিকের নিজস্ব ছিল এবং তিনটিতেই আলাদা আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছিল—হার্ডওয়্যার, ইলেকট্রিক এবং কনফেকশনারির দোকান বলে জানা গেছে।

ঘটনার পর শিলচর প্রশাসনের তরফ থেকে একটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। যদিও দমকল ও পুলিশের তরফে তদন্ত করে চূড়ান্ত কারণ জানানো হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, শহরের নিকটবর্তী এলাকাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত দমকল সুবিধা কেন নেই?

কেন শহরের বাইরের অংশের জন্য আলাদা দমকল কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে না? তাঁদের মতে, সময় মতো দমকল বাহিনী পৌঁছালে ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কম হতে পারত। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আগুন লাগার পর আমরা নিজেরাই জলের ড্রাম, বালতি নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে, কিন্তু আগুন এত দ্রুত ছড়াচ্ছিল যে কিছুই করতে পারিনি। চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে গেল।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…