জল জীবন মিশন প্রকল্পে পিএইচই ডিভিশন টু-য়ে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ ভুক্তভোগী মানুষের ! টাকা এসেছে, খরচও হয়েছে, লাভবান হননি জনতা, 

তথ্য অনুযায়ী, গত তিন অর্থবছরে শিলচর পিএইচই ডিভিশন টু-তে জল জীবন মিশন প্রকল্পের জন্য মোট ৩৭১ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৬০ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে-২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ হয়েছিল ১১৫ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৩৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ১৮৪ কোটি ৫৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩০৮ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ৭১ কোটি ৩৬ লক্ষ ২ হাজার ৪১৪ টাকা।

অবাক করার বিষয় হল, খরচের হিসেবেও দেখানো হয়েছে প্রায় পুরো বরাদ্দই ব্যয় হয়ে গেছে! ২০২২-২৩ সালে খরচ দেখানো হয়েছে ১১৫ কোটি ৭৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৭২ টাকা। ২০২৩-২৪ সালে ১৮৪ কোটি ৪৭ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৯ টাকা। ২০২৪-২৫ সালে পুরো ৭১ কোটি ৩৬ লক্ষ ২ হাজার ৪১৪ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৩৭১ কোটি ৬১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৫৫ টাকা! অর্থাৎ কাগজে কলমে প্রায় পুরো অর্থই খরচ হয়েছে।

শিলচরের বহু গ্রাম ও শহরতলি এলাকায় আজও জলের জন্য হাহাকার চলছে। কোথাও পাইপলাইন নেই, কোথাও সংযোগ থাকলেও জল আসে না, কোথাও আবার কাজ শুরুই হয়নি। বহু জায়গায় মাটি খুঁড়ে রেখে বছরের পর বছর প্রকল্প ফেলে রাখা হয়েছে। আর সেই কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার ও বিভাগীয় আধিকারিকরা নিশ্চিন্তে কোটি কোটি টাকার বিল পাশ করিয়ে নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর তারা লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন—জল পাচ্ছেন না, কাজ অসম্পূর্ণ, অথচ কাগজে সম্পূর্ণ কাজ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু কোনও তদন্ত হয়নি, হয়নি কোনও প্রতিকার। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে এত বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ দেখানো হল অথচ বাস্তবে কোনও কাজ চোখে পড়ছে না? এসব কাজের মান যাচাই বা পরিদর্শনের কোনও ব্যবস্থা আছে কি না? আর যদি থেকে থাকে, তবে সেই আধিকারিকরা কোথায়? তারা কি ইচ্ছাকৃতভাবেই চোখ বন্ধ করে রেখেছেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনায় এক বৃহৎ দুর্নীতির ছক স্পষ্ট। ঠিকাদার ও পিএইচই বিভাগের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার যোগসাজশে কাগজে খরচ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটি শুধুমাত্র আর্থিক দুর্নীতি নয়, বরং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের এক জঘন্য উদাহরণ। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এত বড় অঙ্কের সরকারি অর্থের ব্যয় কোথায় এবং কীভাবে হলো—তা খতিয়ে দেখার কি কোনও দায় প্রশাসনের নেই? মানুষ জানতে চায়, কাদের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছিল?

তাদের কী পরিমাণ বিল অনুমোদিত হয়েছে? কোন কোন এলাকায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আর কোথায় হয়নি? কত বাড়ি এখনও জলবঞ্চিত? কোন আধিকারিক দায়িত্বে ছিলেন বরাদ্দকৃত টাকার ব্যবস্থাপনায়? এই প্রতিবেদন সামনে আসার পর সচেতন মহল ও নাগরিক সমাজ জোর দাবি জানাচ্ছেন, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শুরু হোক। দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

প্রয়োজন হলে সি বি আই বা নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক। আরও আশঙ্কার বিষয়, যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী অর্থবছরগুলিতেও একইভাবে টাকা বরাদ্দ হবে এবং দুর্নীতির চক্র আরও গভীরে যাবে। জল জীবন মিশন প্রকল্প সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ও অধিকার। এই স্বপ্ন ভেঙে কেউ যদি পকেট ভরতে চায়, তবে তাদের শাস্তি হওয়া জরুরি। পিএইচই ডিভিশন টু-তে স্বচ্ছতা ফিরুক, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হোক—এই দাবি এখন গোটা কাছাড়বাসীর। 

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…