শিলচরে একাদশ ভাষা শহিদ স্মরণ ও বীর সেনানীদের শ্রদ্ধা নিবেদনে বহু ভাষিক মহামিছিল

বরাকবাণী প্রতিবেদন  শিলচর,  ১৬ মে: বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার স্বীকৃতির পিছনে যে একাদশ শহিদের আত্মত্যাগ রয়েছে, সেই গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণ করে এবং দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সেনানীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামী শুক্রবার, ১৬ মে, শিলচরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এক বহু ভাষিক মহামিছিল। বিকেল তিনটায় ‘বরাকের আওয়াজ’-এর আহ্বানে রাঙ্গিরখাড়ি নেতাজি মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু হবে এই মহামিছিল, যা প্রেমতলা, শিলংপট্টি হয়ে গান্ধীবাগ পর্যন্ত পরিক্রমা করবে।

এই মহামিছিলের মাধ্যমে একদিকে যেমন ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হবে, তেমনই অন্যদিকে ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রতিও জানানো হবে শ্রদ্ধা। ‘বরাকের আওয়াজ’-এর পক্ষ থেকে এই মহামিছিলের মাধ্যমে উনিশে মে-র চেতনাকে সারা অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংগঠনের আহ্বান, উনিশে মে কেবল একটি তারিখ নয়, এটি বরাকবাসীর আত্মপরিচয় ও ভাষার অধিকারের ইতিহাস। ১৯৬১ সালের সেই রক্তঝরা দিনে, একাদশ শহিদ তাঁদের জীবনের বিনিময়ে বাংলা ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন। তাঁদের সেই আত্মবিসর্জন কখনও ভুলে যাওয়া চলবে না।

বরাক উপত্যকার ভাষিক অধিকারের প্রশ্নে আজও যে অনেক লড়াই বাকি, সে কথা তুলে ধরে সংগঠনটি জানিয়েছে, শহিদদের আদর্শকে সামনে রেখেই আজ আমাদের পথ চলতে হবে। ভাষা, সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বরাকবাসীকে। এই মিছিল কেবল শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, এটি আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। সাংগঠনিক সদস্যরা জানিয়েছেন, এই মহামিছিলে অংশগ্রহণ করবেন বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষেরা বাংলা, হিন্দি, মণিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া মৈতৈ, রাজবংশী, ডিমাসা, ত্রিপুরী, নাগা সহ আরও বহু জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। এই উদ্যোগ বরাকের ভাষিক বৈচিত্র্য এবং সামাজিক সংহতির প্রতীক হয়ে উঠবে বলেই তাঁদের আশা।

এছাড়াও, দেশের জন্য যাঁরা জীবন বিসর্জন দিয়েছেন—সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সেই বীর শহিদদের প্রতিও এই মিছিলে জানানো হবে গভীর শ্রদ্ধা। ‘বরাকের আওয়াজ’ জানিয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষায় যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের ভুলে গেলে চলবে না। তাঁদের স্মরণে এই মহামিছিল আরও একবার সকল নাগরিককে একত্রিত করবে জাতীয়তাবাদের মর্মবাণী নিয়ে।

এই মহামিছিলকে সফল করে তুলতে বরাকের সর্বস্তরের নাগরিকদের, বিশেষ করে যুবসমাজ ও ছাত্রসমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। তাঁদের বক্তব্য, এটি শুধু অতীতকে স্মরণ করার একটি উদ্যোগ নয়, এটি ভবিষ্যতের পথনির্দেশও। নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

শিলচর শহরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠান এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে। মহামিছিলকে ঘিরে শহরে এক বিশেষ আবেগের সঞ্চার ঘটেছে ইতিমধ্যেই। বরাক উপত্যকার হৃদয়জুড়ে থাকা এই স্মৃতির দিনটি সম্মিলিত শ্রদ্ধা ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে পালন করতে প্রস্তুত শিলচর।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…