
বিমল চৌধুরী বরাকবাণী প্রতিনিধি শনবিল ১৪ মেঃ গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে গামারিয়া জিপিতে এবার যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। তাবড় তাবড় প্রাক্তন প্রতিনিধিদের ছাপিয়ে প্রতিটি আসনে জয়ী হলেন এক ঝাঁক নবীন মুখ। রামকৃষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটারদের রায়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত—তারা পরিবর্তন চায়, এবং সেই পরিবর্তনের রাশ এখন তরুণ প্রজন্মের হাতে।
আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য পদে বিশাল ব্যবধানে জয় মহামায়ার, গামারিয়া জিপির আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য পদে এবার মহামায়া দাস বাজিমাত করলেন। নির্দলীয় প্রার্থী সুপর্ণা দাসকে বিপুল ১৬০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে নেন তিনি। মহামায়ার এই জয় গামারিয়া অঞ্চলে এক নতুন নেতৃত্বের বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলকে কত ভোটে জয়ী হলেন? ১ নং স্বাস্তিপুর ওয়ার্ড: তিন প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রমেশ দাস তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দ্রজিৎ দাসকে ২১ ভোটে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন। ২ নং সন্তোষপুর ওয়ার্ড: সঞ্চিতা দাস অজিত দাসকে ৫৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। নারী নেতৃত্বের এই উত্থান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
৩ নং ওয়ার্ড (নবীনগ্রাম): সান্তনা দাস একপ্রকার ঝড় তুলে ২২৪ ভোটের ব্যবধানে ঊষা দাসকে পরাজিত করেন। এটি ছিল এবারের নির্বাচনের অন্যতম বড় ব্যবধান। ৪ নং কালিবাড়ি ও শ্রীরামপুর ওয়ার্ড: পাঁচ প্রার্থীর কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অসিতা দাস ৪৩ ভোটে পরাজিত করেন দুর্গা দাসকে। ৫ নং ওয়ার্ড (নবীন গ্রাম): পিংকি নমঃশূদ্র তুলসী রায়কে ৫৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সহজেই জয়ী হন।
৬ নং ওয়ার্ড (নবীনগ্রাম): তিন প্রার্থীর মধ্যে শিল্পজিৎ নমঃশূদ্র ১৪৬ ভোটে হারান সীমা নমঃশূদ্রকে। তার এই জয় বহুদিন পরে একজন তরুণ পুরুষ প্রার্থীর বিজয় হিসেবে উল্লেখযোগ্য। ৭ নং ওয়ার্ড (গোপীকানগর শান্তিপুর): সবচেয়ে রোমাঞ্চকর লড়াইটি হয় এই ওয়ার্ডে। মাত্র ৪ ভোটের ব্যবধানে অলি দাস পরাজিত করেন সুজাতা দাসকে। ভোট গণনার শেষপর্যন্ত উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে।
৮ নং ওয়ার্ড (উত্তর গামারিয়া): হাসনা খাতুন মাত্র ১২ ভোটে বীণা দাসকে হারিয়ে জয়ী হন। মুসলিম মহিলা প্রার্থীর এই জয়কে অনেকে সামাজিক সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে দেখছেন। ৯ নং ওয়ার্ড (মধ্য গামারিয়া): সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় পান শুরমনি সরকার। শুক্লা দাসকে তিনি ৪১৫ ভোটে হারান। এই জয় স্পষ্ট করে দেয়, এলাকাবাসী তাকে কতটা ভরসা করেছেন। ১০ নং ওয়ার্ড (দক্ষিণ গামারিয়া): মিঠুন দাস তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গৌরাঙ্গ দে-কে ১২২ ভোটে পরাজিত করে নির্বাচনী যুদ্ধের সমাপ্তি টানেন।
যদিও এই নির্বাচন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরপুর, তবে এর মাঝেও নজর কেড়েছে প্রার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য। পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেই বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানাতে তাদের বাড়িতে গিয়েছেন। কোথাও দেখা যায়নি হিংসা বা বিদ্বেষের ছবি, বরং ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ একটি গ্রামীণ নির্বাচনের নমুনা।
গামারিয়া জিপির এই ফলাফল প্রমাণ করে, মানুষ এখন চাইছে কর্মী, উদ্যোগী ও সমাজসচেতন প্রতিনিধি। প্রাক্তনদের হটিয়ে নতুন মুখদের জয় একদিকে যেমন তরুণ নেতৃত্বের উত্থান ঘটাল, অন্যদিকে তেমনি গ্রামীণ রাজনীতিতে নতুন ভাবনার পথ খুলে দিল। এই নির্বাচনের বার্তা স্পষ্ট—বদল চাই, এবং সেই বদলের পথে হাঁটছে গামারিয়া।