বেহাল রাস্তা, আলোহীন অন্ধকার, নেই ট্রাফিক ব্যবস্থা—প্রশাসনিক অবহেলায় একের পর এক দুর্ঘটনা, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

বছরের পর বছর ধরে অব্যবস্থার ছবিটা একই রয়ে গেছে। প্রশাসন বদলেছে, জনপ্রতিনিধিরাও পাল্টেছেন, কিন্তু এই রাস্তার ভাগ্য আর বদলায়নি। চারপাশে বহুতল ভবনের আধুনিকতার আলোছায়ায় ঢাকা এই রোডে সন্ধ্যার পর যেন অচেনা এক অন্ধকার নেমে আসে। নেই কোনো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলো, নেই কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল, আর রাস্তা জুড়ে বড় বড় গর্ত। এতে করে রাতবিরেতে পথ চলা হয়ে উঠছে বিপজ্জনক।

এক টোটো চালক সংবাদমাধ্যমকে জানান, গতকালই এক বাইকচালক রাস্তার গর্তে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। প্রায় দুইদিন পরপরই এমন ঘটনা ঘটে। আমরা আর কতক্ষণ মুখ বুজে এসব সহ্য করব? তার মতে, আলো না থাকাটাই বড় সমস্যা। সন্ধ্যার পর গর্ত চোখে পড়ে না।

স্থানীয় বাসিন্দা অমিতাভ দাস বলেন, নির্বাচনের সময় যাঁরা আমাদের দরজায় দরজায় ঘুরে ভোট চান, তাঁরা কি এই রাস্তায় চোখ রাখেন না? একটা পথ—যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাফেরা করেন, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কর্মজীবীরা এই পথেই যাতায়াত করেন—সেই রাস্তাটার যদি এই হাল হয়, তাহলে কি প্রশাসনের কিছুই করার নেই?

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল, বিদ্যালয় এবং বাজার এলাকার সংযোগস্থল। ফলে দিনের অধিকাংশ সময়ই এখানে যানবাহনের ভিড় লেগে থাকে। কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল বা নিয়ন্ত্রক না থাকায় রাস্তায় অনিয়মের চূড়ান্ত চিত্র প্রতিদিন দেখা যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার আবেদন-নিবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। পুরসভায়, এমনকি বিধায়কের ও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার ফল শূন্য। এতবার জানানো সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ নীরব। একটা আলো বসাতে কত বড় পরিকল্পনা দরকার? জানান স্থানীয় এক প্রবীণ নাগরিক।

বাসিন্দাদের দাবি তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছে, অবিলম্বে রাস্তার মেরামতি করা হোক। পর্যাপ্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্ট্রিট লাইট বসানো হোক। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে সিগন্যাল ও হেলমেট চেকিংয়ের ব্যবস্থা হোক।

জনপ্রতিনিধিদের প্রতি স্থানীয়দের স্পষ্ট বার্তা—ভোটের সময় শুধু মুখ দেখিয়ে গেলে হবে না, দায়িত্ব পালনের মানসিকতা থাকতে হবে। রাস্তা সংস্কার এবং মানুষের নিরাপত্তা যদি তাঁদের অগ্রাধিকারে না থাকে, তাহলে তাঁদের প্রতি মানুষের আস্থা ভবিষ্যতে আর টিকে থাকবে না।

অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, আজাদ সাগর রোড এখন আর শুধুমাত্র একটি পথ নয়, এটা প্রশাসনিক অবহেলার অবহেলার শিকার। প্রতিদিনের ছোট-বড় দুর্ঘটনা যেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতার কাঁটা হয়ে উঠেছে। এই কাঁটা যতদিন না উপড়ে ফেলা হচ্ছে, ততদিন শ্রীভূমির বাসিন্দাদের যন্ত্রণা চলবে। শহরের প্রান্তিক মানুষদের জীবন যে এতটা মূল্যহীন হয়ে পড়েছে—এই ছবিই যেন প্রতিনিয়ত ফুটে উঠছে আজাদ সাগর রোডে।

Related Posts

আদালতের নির্দেশ ছাড়াই দোকান ভাঙার নোটিশ, শিলচর পৌর নিগমের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ২৬ জুলাইঃ শিলচর শহরের বুকে আবারও প্রশ্নের মুখে মানবিকতা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা। বিকলাঙ্গ এক দোকানদারের মাথার উপর থেকে যেন রাতারাতি ছিনিয়ে নেওয়া হল ছাদ, পুড়িয়ে দেওয়া হল পঁচিশ বছরের…

লঙ্গাই প্ল্যান্টের পাশে ৮৬ কোটি টাকার নতুন জল প্রকল্পের কাজের শুভারম্ভ, ২৭ জুলাই মন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বরুয়ার হাতে ভূমিপূজন

হর্ষিত দত্ত বরাকবাণী প্রতিনিধি  শ্রীভূমি ২৬ জুলাই: শহর শ্রীভূমির  পানীয়জলের সমস্যা দূর করতে এবার নতুন জল প্রকল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বর্তমান লঙ্গাই প্ল্যান্টের পাশেই…